পনেরো বছর পরে আ. লীগের ৪ কর্মী হত্যা মামলার রায়ে ২৩ জনের ফাঁসি

জেসমিন পাপড়ি
2017.05.17
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
রায়ের পরে আদালতে হাজির হওয়া আসামিদের কারাগারে নেওয়া হয়। রায়ের পরে আদালতে হাজির হওয়া আসামিদের কারাগারে নেওয়া হয়। মে ১৭, ২০১৭।
স্টার মেইল

পনেরো বছর আগে আওয়ামী লীগের চার কর্মীকে হত্যার দায়ে বিএনপি নেতাসহ ২৩ জনের ফাঁসির রায় দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত।

প্রত্যক্ষদর্শী, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের সময় মামলার প্রধান আসামি তৎকালীন আড়াইহাজার থানা বিএনপির সহসভাপতি আবুল বাশার কাশুসহ সাজাপ্রাপ্ত ১৯ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি চারজন এখনো পলাতক।

এই মামলাকে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম উদাহরণ বলছেন আইনজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগিরা ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয় অভিযোগ এনে দেশের সকল আদালতে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমানোর সুপারিশ করেছেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বেনারকে বলেন, “আমাদের দেশে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা হয়। এতে বিচারপ্রার্থীরা অনিশ্চয়তায় ভোগে। তবে এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক বিচারক নিয়োগ হয়েছে। আশা করি সামনে পরিবর্তন দেখতে পাব।”

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার জালাকান্দি গ্রামের ছাত্রলীগকর্মী বারেক, তার ফুফাতো ভাই বাদল, আওয়ামী লীগের কর্মী ফারুক ও কবীরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। গোপালদী ইউনিয়ন বিএনপির তৎকালীন সভাপতি আবুল বাশার কাশু ও তার লোকজনকে এই কাজের জন্য দায়ী করা হয়। তারা নির্যাতনের পর আগুনে পুড়িয়ে ওই চারজনকে হত্যা করে।

ওই ঘটনায় নিহত বারেকের বাবা সাবেক ইউপি সদস্য আজগর আলী বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০২ সালে ২১ জনকে সাক্ষীসহ ২৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তবে মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বাদী আজগর আলী মারা যান। পরে তার ছেলে ও নিহত বারেকের ভাই সফিকুল মামলার বাদী হন।

এই মামলার প্রধান আসামি আবুল বাশার কাশু ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর বেশ কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

তবে নিহত বারেকের ভাই আড়াইহাজার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক বেনারকে বলেন, “আওয়ামী লীগে যোগ দিলেই অপরাধী মাফ পাবে, সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।”

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আসামিরা যাতে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে সে দিকে নজর রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমার বাবা সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি। এখন যেন দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হয়।”

এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করতে আসামিপক্ষ নানা তৎপরতা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলাম।

আদালতে উপস্থিত ১৯ আসামি হলেন- মামলার প্রধান আসামি আবুল বাশার কাশু, আবু কালাম, জহির উদ্দিন মেম্বার, ডালিম, রফিক, ইয়াকুব আলী, হালিম, শাহাবুদ্দিন, রুহেল, লিয়াকত আলী মাস্টার, ইদ্রিস আলী, সিরাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ হোসেন, ইউনুছ আলী, আহাদ আলী, ফারুক হোসেন, আব্দুল হাই, গোলাম আযম ও খোকন।

জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। গত ৪ মে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায় আদালত।

এ মামলায় পলাতক রয়েছেন আল-আমিন, রুহুল আমিন, তাজুল ইসলাম ও হারুন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি জাসমিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, “বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন আড়াইহাজার থানা বিএনপির সহসভাপতি আবুল বাশার কাশুসহ অন্যান্য আসামিরা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায় তা আদালতে প্রমাণ হয়েছে।”

তিনি জানান, অভিযোগপত্রে উল্লেখ ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সে অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৩ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

এটি একটি ‘যুগান্তকারী রায়’ উল্লেখ করে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, “অপরাধ করে কেউ পার পায় না এই রায়ের মাধ্যমে সেটা আবারও প্রমাণিত হলো। এই রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

তবে অসন্তোষ প্রকাশ করে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে আসামিপক্ষ। আসামিদের আইনজীবী খোরশেদ আলম মোল্লা বেনারকে বলেন, “আসামিরা ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছেন। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আশা করি সেখানে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।