ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করল চীনা কোম্পানি

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.12.26
ঢাকা
ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ  কাজ শুরু করল চীনা কোম্পানি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জকে সংযোগকারী ৪৮ কিলোমিটার ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯G
ছবি: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় সাড়ে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশে সড়ক খাতের প্রথম প্রকল্প ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু করেছে একটি চীনা কোম্পানি।

বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জকে সংযোগকারী ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রস্তাবিত ছয় লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

স্থানীয় দুটি কোম্পানির সহায়তায় চীনা কোম্পানি সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ প্রকল্পটির ৭০ ভাগ শেয়ার নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে দফায় দফায় সময় ও খরচ বৃদ্ধি করে। এ কারণে প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বেনারকে জানান, “মাননীয় মন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় লেন বিশিষ্ট জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভূলতা-মদনপুর এক্সপ্রেসওয়ের কাজ উদ্বোধন করেছেন। চীনা কোম্পানি সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ মূলত কাজটি করছে।”

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক সবুজ উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে শুরু হওয়া সড়ক পরিবহন খাতের প্রথম প্রকল্প জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভূলতা-মদনপুর এক্সপ্রেসওয়ে। পুরো প্রকল্পের খরচ প্রায় সাড়ে চার’শ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ প্রায় ৫১ মিলিয়ন ডলার দেবে। আর বাকি টাকা চীনা কোম্পানি ও দুটি স্থানীয় কোম্পানি মেটাবে।”

সবুজ উদ্দিন বলেন, “এক্সপ্রেসওয়েটি ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৪০ মিটার প্রশস্ত হবে। এতে ছয়টি লেন থাকবে। চীনা কোম্পানি সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ মূলত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তারা পুরো প্রকল্পের ৭০ ভাগ মালিক হবে। প্রকল্পটি শেষ করতে তাদের তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “পুরো কাজ শেষ করে তারা পরবর্তী ২৫ বছর এক্সপ্রেসওয়েটি পরিচালনা করে জনগণের কাছ থেকে টোল আদায় করবে। এরপর সরকারের কাছে তা হস্তান্তর করবে।”

সবুজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরো উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং বৃহত্তর সিলেটের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে।”

তিনি বলেন, “আর এর ফলে ঢাকার যানজট ছাড়াই পণ্যবাহী যানবাহন ওই সকল জেলা ও চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচল করবে, ব্যবসায় গতি বাড়বে।”

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়ন প্রকল্পে দেশি-বিদেশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব উদ্যোগ (পিপিপি) চালু করে। তবে পিপিপি’র ব্যাপারে সাড়া মিলেছে খুব কম।

এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য চীনা কোম্পানি সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপের সহায়তায় স্থানীয় কোম্পানি শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড যৌথভাবে ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেই চুক্তি অনুসারে বৃহস্পতিবার কাজটি শুরু হলো।

প্রকল্প দলিল অনুযায়ী, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভূলতা-মদনপুর বাইপাস সড়কটি এক লেন বিশিষ্ট। এই রাস্তায় প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করে।

প্রতিদিনই যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট তীব্র হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাথে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসটি নির্মিত হলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের সাথে দেশের বিভিন্ন অংশের যোগাযোগ সহজতর হবে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ. মনসুর।

তিনি বেনারকে বলেন, “আজকে যে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হলো সেটি আমাদের জন্য প্রয়োজন সেব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল থেকে পণ্যবাহী যানবাহনগুলো সহজে চট্টগ্রাম চলাচল করতে পারবে। যানজট কমবে। আর যোগাযোগ ভালো হলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।”

ড. আহসান মনসুর বলেন, “তবে, তিন বছরে কাজটি শেষ হবে কি না সেব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। পিপিপি’র আওতায় প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে তেমন অগ্রগতি নেই। যেমন, পিপিপি’র আওতায় ২০১২ সালে ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস নির্মাণের কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। কিন্তু এখন ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার পরও কাজের অর্ধেকও হয়নি।”

তিনি বলেন, “আবার চীনা কোম্পানির কাছ থেকে সময়মতো কাজ শেষ করার আশা করা কঠিন। চীনা কোম্পানিগুলো প্রথমে অল্প টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ নেয়। এরপর আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে নেয়। সময় বাড়িয়ে নেয়। ফলে কাজ সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হয় না।”

তিনি বলেন, “চীনরা আমাদের মধ্যে দুর্নীতি ছড়ায়। পুরো সিস্টেম তারা দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলছে।”

ড. আহসান মনে করেন, “চীনাদের এই ধরনের কাজ বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। প্রকল্পটির কাজ দেওয়ার আগেই খরচ কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে সময় দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় তারা তাদের অনৈতিক চর্চা চালিয়ে যাবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।