ভিপি নুরের ওপর হামলা: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর গ্রেপ্তার ২
2019.12.23
ঢাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভবনে ঢুকে ভিপি নূরুল হক নুর এবং তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সোমবার দুই সন্দেহভাজন আক্রমণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে আটক করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
রোববার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামধারী ছাত্রলীগ নেতারা ডাকসু ভিপিসহ কমপক্ষে ৩০ জনকে পেটান বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। হামলায় আহতদের মধ্যে কমপক্ষে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
নুর সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে ওই সংগঠনের নেতা হিসেবে ডাকসু ভিপি নির্বাচিত হন। কোটাবিরোধী আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশ নিয়ে সংগঠনটি জনপ্রিয় হয়।
এই সংগঠনের মূল নেতা নুরের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত নয়বার হামলা হয়েছে। প্রায় সব ঘটনায় সরকারি ছাত্র সংগঠন বা অন্য সহযোগী সংগঠনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনার মামলা বা তদন্ত হয়নি। রোববারের হামলায়ও কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি বলে বেনারকে জানান শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান।
এ প্রসঙ্গে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বেনারকে বলেন, “আমরা মামলা করতে পারিনি, কারণ আমরা সবাই হাসপাতালে। আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়েছে। আশা করি আগামীকাল বা পরশু আমরা মামলা করব।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভিপি নুরসহ অন্যদের চিকিৎসায় নয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে নুরসহ তাঁর সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কেন এই হামলা?
হাসান আল মামুন বলেন, “ভারতে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পাশের প্রতিবাদে দিল্লির জামেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানাতে আমরা ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করি।”
তিনি বলেন, “সেইদিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ অন্যান্যরা আমাদের এসে হুমকি দিয়ে জানায়, আমরা কোনোভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ করতে পারব না।”
“ওই ঘটনার রেশ ধরে তারা রোববার পরিকল্পিতভাবে ডাকসু কক্ষে ঢুকে আমাদের লাঠিসোটা, রড ও আরও বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেছে। প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি,” যোগ করেন মামুন।
তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাদের দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এরপর ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”
আহ্বায়ক মামুন জানান, “বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এপিএম সুহেলকে ডাকসু ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে। তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “নুরের ওপর আক্রমণের কারণ হলো ঈর্ষা। ছাত্রলীগ ডাকসুর অধিকাংশ আসনে জিতেছে। শুধু তারা ভিপি পদে হেরে গেছে। এজন্য তারা নুরকে সহ্য করতে পারে না। সে কারণে এপর্যন্ত কমপক্ষে নয়বার আক্রমণ করেছে, আহত করেছে।”
“এভাবে আঘাত করতে থাকলে হয়তো সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষেপে উঠবে। তখন বিষয়টি সরকারের জন্য ভালো হবে না,” যোগ করেন তিনি।
হামলা নিন্দনীয়: ওবায়দুল কাদের
সোমবার সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার সবার রয়েছে। ডাকসুর ভিপি আমাদের দল এবং সরকারের সমালোচনা করতেই পারেন। ভিন্ন মতাবলম্বী হলেও ডাকসু ভিপির ওপর হামলা নিন্দনীয়। যে হামলা হয়েছে সেটি বর্বর।”
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম নুরকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “নেত্রী স্পষ্ট বলেছেন, যারা এ হামলা করেছে তাদের দলীয় পরিচয় যাই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রকাশ্যে এই হামলার সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন নেত্রী।”
তিনি আরও বলেন, “যদি ছাত্রলীগের কেউ এই হামলায় জড়িত থাকে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এই হামলা যারা করেছে, তারা দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তদের ক্ষমা নাই।”
এদিকে ডাকসুর ভিপি ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নাগরিক নিরাপত্তা জোট ও মানবাধিকার ফোরাম বাংলাদেশের ব্যানারে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হামলাকে ‘ন্যাক্কারজনক’ বলে আখ্যায়িত করে দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
হত্যার চেষ্টা: ভিপি নুর
সোমবার ইউটিউবে প্রচারিত এক ভিডিওতে ভিপি নুর বলেন, “এখন আমরা যেহেতু ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করি, এই কারণে ক্ষোভটা আমাদের ওপর বেশি। মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা তো আগেও করেছে। গতকাল কিন্তু হত্যা চেষ্টা করেছে একেবারে। আমার ওপর তিন দফায় হামলা করেছে, আহত না হওয়া পর্যন্ত চলেছে।”
“আমার শরীরের ডান পাশ হয়তো অচল করে দিয়েছে,” জানিয়ে নুর বলেন, “ডাকসুতে ঢুকে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে এভাবে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে, পাকিস্তানি হানাদারদেরও হার মানিয়েছে।”
“একজন একজন করে রুম থেকে ধরে নিয়ে মেরেছে। এই ঘটনাগুলোর যদি দেশবাসী প্রতিবাদ না করে, এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যদি প্রতিরোধ গড়ে না তুলে, আর কেউ কথা বলবে না,” ভিডিও বার্তায় বলেন নুর।
প্রসঙ্গত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মূলত ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন।
এই সংগঠনটির আহ্বায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের অধ্যাপক আকম জামাল উদ্দীন। আর সাধারণ সম্পাদক সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান।
সংগঠনটি গঠনের পর মূল সংগঠন থেকে আলাদা হয়ে যায় সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। নেতৃত্বে আসেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুন। তাঁদের অপকর্মের অভিযোগে ১০ অক্টোবর ওই দুই নেতাকে বহিষ্কার করে সংগঠনটি।
রোববারের হামলায় আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা।
তবে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “ছাত্রলীগ কোনোভাবেই এই ঘটনায় জড়িত নয়। এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ।”