সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন গ্রহণযোগ্য নয়, একমত বাংলাদেশ
2019.07.19
ঢাকা
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অজুহাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ‘মিনিস্ট্রিয়াল টু অ্যাডভান্স রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ শীর্ষক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের শেষদিন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৪টি দেশের সাথে এক যৌথ বিবৃতিতে নিজের এই অবস্থান ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আয়োজিত তিন দিনের ওই বৈঠকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর আমন্ত্রণে বাংলাদেশর পক্ষে অংশগ্রহণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম অথবা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অজুহাতে ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে যৌক্তিক করার যে কোনো প্রচেষ্টাকে আমরা প্রত্যাখ্যান ও এর বিরুদ্ধাচারণ করছি,” বলা হয় বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশের যৌথ বিবৃতিতে।
“সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানগুলোতে আমাদের কার্যক্রম ও আচরণ অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক পরিচালিত হবে,” জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত হলে তাঁদেরও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বাংলাদেশেকে ‘মানবতার দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করে “জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকারের বিষয় তুলে ধরেন,” শুক্রবার ওয়শিংটন ডিসি থেকে এক বিবৃতিতে জানায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সমুন্নত করেছে,” জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, “অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির কারণে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নজিরবিহীন উন্নয়ন অর্জিত হয়েছে।”
এদিকে “মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা খুবই বিশদ এবং জটিল বিষয়,” মন্তব্য করে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা শুক্রবার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশ এসবের মূল ভাব শ্রদ্ধার সাথে অনুসরণ করার চেষ্টা করে।”
“বাংলাদেশ পুলিশ সবাইকে সম্মান ও গুরুত্ব দেয়,” জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো জঙ্গির মানবাধিকার লঙ্ঘণ না করার ব্যাপারেও আমরা যথেষ্ট সচেষ্ট থাকি।”
তিনি বলেন, “এখানে দলমত নির্বিশেষে সবাই যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর পুলিশের বিশেষ নজর রয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন তাঁদের প্রতিটি উৎসব ও অনুষ্ঠানে আমাদের সরব উপস্থিত থাকে। তাঁরা যথেষ্ট নিরাপত্তা পাচ্ছেন।”
“বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা যথেষ্ট শক্তিশালী,” যোগ করেন সোহেল রানা।
মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত এই বৈঠকে বিভিন্ন দেশের ৪০ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১০৬টি দেশের প্রতিনিধি যোগদান করেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতায় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ও নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হয় বলেও মন্তব্য করা হয় বৈঠকের বিবৃতিতে।
এ প্রসঙ্গে “জঙ্গিবাদ সমস্যাটা শুধুমাত্র নিরাপত্তাজনিত নয়,” মন্তব্য করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “জঙ্গিবাদের মতাদর্শিক জায়গাটাকে আদর্শ দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সুফল পাওয়া যাবে না।”
ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুল তথ্য উপস্থাপনের নিন্দা
ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের দ্বিতীয় দিন বুধবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭ জন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয় সাহা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন কোটি সত্তুর লাখ মানুষ গুমের শিকার বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করে এ বিষয়ে তাঁর সহায়তা চান।
“স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ গুম হয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই,” বলেন প্রিয় সাহা।
মুসলিম মৌলবাদীরা তাঁর বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে এবং জমি দখল করে নিয়েছে জানিয়ে প্রিয় সাহা ট্রাম্পকে বলেন, “কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।”
মৌলবাদীরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায় বলেও ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে প্রিয় সাহার অভিযোগের মতো কোনো অভিযোগ এর আগে কাউকে করতে দেখেননি মন্তব্য করে নিজের ফেসবুক পেজে এই বক্তব্যের তিব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, “তিনি কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে।”
তবে “তার অভিযোগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে,” মন্তব্য করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লেখেন, “ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। অনেকেই ব্যক্তি স্বার্থে বা না বুঝে এটার ক্ষতি করে ফেলেন। সবার উচিত এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা।”
বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, প্রিয় সাহা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সহকারী পরিচালক। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন প্রিয়া সাহা। তাঁর আদি নিবাস পিরোজপুর জেলায়।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি।