দেশহীন মানুষে পরিণত হতে পারেন আসামের দশ লাখ মানুষ

ঝুমুর দেব
2018.12.31
গৌহাটি, ভারত
181231-ID-BD-Assam-registry1000.jpg নাগরিকপঞ্জিতে নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য আসামের কামরূপ জেলার একটি সহায়তা কেন্দ্রে নাগরিকদের লাইন। ৮ ডিসেম্বর ২০১৮। [এফপি]
[এফপি]

ভারতের আসাম রাজ্যে দশ লাখেরও বেশি নাগরিক দেশহীন মানুষে পরিণত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বাঙালি। নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদপড়াদের নাম তালিকাভুক্তির জন্য আপিলের মেয়াদ পার হওয়ায় তাঁরা এই ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

১৯৫১ সালের পর এ বছরের প্রথম দিকে আসাম তাদের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) হালনাগাদের কার্যক্রম শুরু করে। বিতর্কিত এই পদক্ষেপে রাজ্যের প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ ভুক্তভোগীতে পরিণত হন। যার বেশিরভাগই বাঙালি মুসলিম।

ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে আসামেই রয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বাস, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩৪ ভাগ।

সরকারের মতে, ভারতে বসবাসকারী ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ চিহ্নিত করাই নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদ করার মূল উদ্দেশ্য।

নাগরিকপঞ্জি কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার বেনারকে বলেন, “গত ৩০ জুনে প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদপড়া ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে মেয়াদের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা ২৯ লাখ পুনর্বিবেচনার আবেদন ও সাত হাজার আপত্তি পেয়েছি।”

ভারত সরকারের মতে, নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদ করার পুরো প্রক্রিয়াটি আসন্ন বছরের মাঝামাঝি শেষ হতে পারে।

রাজ্যে বসবাসকারী চল্লিশ লাখ লোককে বাদ দিয়ে গত জুনে প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায় মোট দুই কোটি নব্বই লাখ মানুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।

চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদপড়াদের আপিল আবেদন ও আপত্তি গ্রহণের জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এ উদ্দেশ্য রাজ্যে প্রায় আড়াই হাজার সহায়তা কেন্দ্র খুলেছিল আসাম সরকার।

এদিকে আপিল ও আপত্তি জমা দেবার সময়সীমা পার হবার পরও যারা কোনো ধরনের আবেদন করেননি, তাঁরা সকলেই ভারতের নাগরিকত্ব হারিয়ে দেশহীন মানুষে পরিণত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন এনআরসি কর্মকর্তারা। এইসব মানুষদের বেশিরভাগই বাঙালি।

“তাঁরা যদি ভারতের নাগরিকত্বের পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারেন, আর বাঙালি হয়ে থাকেন, তবে তাঁরা অবশ্যই বিদেশি,” বেনারকে বলেন এনআরসির ওই কর্মকর্তা।

“কারা কারা বিদেশি তা আমরা এখনো চিহ্নিত করিনি,” যোগ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ভারত সরকার মনে করে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর সীমান্ত অতিক্রম করে আসামে আসা হাজার হাজার মানুষের বাংলাদেশে ফেরত যাওয়া উচিত। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের অভিমত, তাঁরা ভারতীয়।

নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলার জন্য ভারতের হাইকোর্ট পাঁচটি নথির তালিকা নির্ধারিত করে দেয়। এই পাঁচটি নথি হলো- ১৯৫১ সালের এনআরসি, ১৯৬৬ ও ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকা, ১৯৭১ পর্যন্ত শরণার্থী নিবন্ধন সার্টিফিকেট এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত রেশন কার্ড।

এইসব নথি দেখিয়ে নাগরিকদের প্রমাণ করতে হবে যে, তাঁরা কিংবা তাঁদের পূর্বপুরুষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার আগ থেকেই ভারতে বসবাস করছেন।
“বাদপড়াদের বড়ো অংশটাই হচ্ছে নিরক্ষর এবং দরিদ্র মানুষ, যারা এতসব জটিলতার কিছুই বোঝেন না। ফলে নাম তালিকাভুক্তির জন্য পুনির্বিবেচনার আবেদনও খুব ধীর গতিতে এগিয়েছে,” বেনারকে বলেন আসামের আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী।

এদিকে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অবৈধ বাংলাদেশিদের বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মতে এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারতে পাড়ি দিয়েছেন।

তবে, যাদের নাম বাদ পড়বে তাঁদের সম্পর্কে ভারত সকার এখনো কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা না করায় সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মান্দার বেনারকে বলেন, “নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া হাজার হাজার মানুষের ক্ষেত্রে কী করা হবে, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা প্রকাশ করেনি ভারত সরকার।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।