সাময়িক স্থগিতের পর সীমান্তে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফের চালু

প্রাপ্তি রহমান
2020.01.02
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
200102_mobile_network_1000.jpg ঝিনাইদহ সীমান্তে বিজিবির পাহারা। গত এক বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগই ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯।
[নিউজরুম ফটো]

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং নাগরিকপঞ্জিকে (এনআরসি) কেন্দ্র করে নিরাপত্তার শঙ্কায় সীমান্ত এলাকায় টেলিযোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার দুদিন পর বুধবার থেকে তা আবার সচল করেছে বাংলাদেশ। তবে নিরাপত্তার শঙ্কাটা কী ছিল সে সম্পর্কে সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বিজিবির কোনো উদ্বেগ নেই। এগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনও একই দাবি করেছিলেন। যদিও সংবাদ সম্মেলনেই বিজিবির মহাপরিচালক জানান, গত এক বছরে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে যত মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন, তার প্রায় অর্ধেকই এসেছেন গত নভেম্বর- ডিসেম্বরে।

গত বছর ভারত থেকে প্রায় এক হাজার জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “এর মধ্যে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এসেছে ৪৪৫ জন। এরা সবাই বাংলাদেশি। বিভিন্ন সময় তারা দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়েছিল,” সাংবাদিকদের বলেন মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, গত ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লিতে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সঙ্গে বৈঠকে এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ বিজিবি মনে করে, এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “গত এক বছরে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ৬০৬ জন পুরুষ, ২৫৮ জন নারী ও ১৩৫ জন শিশু অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে নভেম্বরে ৩১২ জন ও ডিসেম্বরে ১৩৩ জন প্রবেশ করেছে।”

অনুপ্রবেশকারীরা সবাই বাংলাদেশি জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “কাজের প্রয়োজনে কোনো না কোনো সময় তারা ভারতে গিয়েছিল। বেশিরভাগই ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে এসেছে। তবে, এই অনুপ্রবেশের সঙ্গে এনআরসির সম্পর্ক নেই।”
এনআরসি নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি; বিজিবি মহাপরিচালক এমন দাবি করলেও, সাংবাদিকদের বেশিরভাগ প্রশ্নই ছিল এনআরসি পরবর্তী সময়ে বিজিবির প্রস্তুতি নিয়ে।

জবাবে মহাপরিচালক বলেন, “বিজিবি কাউকে অবৈধভাবে বাংলাদেশ ছাড়তে দেবে না, বাংলাদেশে প্রবেশও করতে দেবে না।”

তিনি আরও বলেন, বিজিবি প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে।
প্রসঙ্গত, ভারতে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে অস্বস্তির শুরু আসাম থেকে। গত ৩১ আগস্ট আসামের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর সেখানকার ১৯ লাখ মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে, যাদের বেশিরভাগই বাঙালি। একই ধারাবাহিকতায় গত ১০ ডিসেম্বও ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়।

এতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ভারতীয় মুসলিমদের আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত একদিন তাঁদের রাষ্ট্রহীন করে দেবে। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এ নিয়ে উদ্বেগ আছে।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সাাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায় বেনারকে বলেন, “ভারতে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে শুধু দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা-ই নয়, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর দিয়েও লোকজন ঢুকছে। বিষয়টা বাংলাদেশ সরকারের খোলাসা করা দরকার এবং যথাযথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”

ঝিনাইদহের বাসিন্দা আবদুস সালাম টেলিফোনে বেনারকে জানান, এখনও ভারত থেকে লোকজন আসছে। কিন্তু প্রতিরোধের ব্যবস্থা দুর্বল।

তিনি বলেন, “শুরুতে পালায় পালায় পাহারার ব্যবস্থা ছিল, এখন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। লোকজন কিন্তু ঢুকছেই।”

মোবাইল নেটওয়ার্ক ফের চালু
গত ২৯ ডিসেম্বর বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে চিঠি দিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্তে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের উপপরিচালক মো. সোহেল রানা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক কাভারেজ বন্ধ রাখতে হবে।”
নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা কেন সে ব্যাখ্যা অবশ্য বিটিআরসির কাছে পাওয়া যায়নি।
তবে, বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, এনআরসি নিয়ে যেন কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়, কেউ যেন গুজব রটাতে না পারে, সেজন্য সরকার তৎপর আছে।

“গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট আছে যে গুজব রটনা হতে পারে,” গত ৩০ ডিসেম্বর বিবিসিকে বলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।

তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় দেড় কোটি মানুষ মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দুই দিনের মাথায় এ সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে সরকার।

এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে সরকার।”

তবে কোন আশঙ্কা থেকে নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয়েছিল তার ব্যাখ্যা তিনিও দেননি।

বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন খান বেনারকে জানান, সংস্থাটি নির্দেশিত হয়ে টেলিযোগাযোগ বন্ধের চিঠি দিয়েছিল, এখন নির্দেশিত হয়ে নেটওয়ার্ক সচল করার চিঠি দিয়েছে।
“রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল যে উৎস থেকে, সেগুলো সক্রিয় নয় নিশ্চিত হয়েই সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে,” বলেন জাকির হোসেন খান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।