ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গুজব ঠেকাতে সীমান্তে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ

শরীফ খিয়াম
2019.12.31
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
191231_Bangladesh_shuts_mobile_network_1000.jpg সীমান্তের অন্য পারে বসবাস করা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করছেন ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকেরা। লালমনিরহাট, ২৮ অক্টোবর ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সীমান্ত এলাকায় গুজব রুখতে শূন্যরেখা থেকে দেশের অভ্যন্তরে এক কিলোমিটার পর্যন্ত বাংলাদেশি সবগুলো মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “মোবাইল অপারেটরগুলোকে রোববার রাতেই আমরা চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। বিটিআরসি তাদের কোনো নির্দেশনা দিলে সাধারণত তা সাথে সাথেই বলবৎ করা হয়।”

“জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এমনটা করা হয়েছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “সীমান্ত এলাকায় গুজব বা প্রোপাগান্ডা ঠেকানোর মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যে কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের এটা করতে বলা হয়েছে।”

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে সমগ্র ভারতজুড়ে যখন বিক্ষোভের ঢেউ, ঠিক সেই সময়ে এই পদক্ষেপ নিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুর রশীদ বেনারকে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সীমান্তে আমাদের নিরাপত্তা বাড়াবে।”

গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক বাংলাদেশকে পাঠানো বিটিআরসির চিঠিতে ‘দেশের নিরাপত্তার স্বার্থের’ কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘মোবাইল কাভারেজ’ বন্ধ থাকবে।

সংস্থার স্পেকট্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সোহেল রানা স্বাক্ষরিত চিঠিটিতে জরুরি ভিত্তিতে এই নির্দেশ কার্যকর করে বিটিআরসিকে জানাতে বলা হয়েছে।

এদিকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ভারতের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে যেন কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়, কেউ যেন প্রোপাগান্ডা বা গুজব রটনা করতে না পারে, সেজন্য সরকার তৎপর আছে।”

সীমান্ত এলাকায় গুজব রটনা হতে পারে মর্মে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে বলেও বিবিসির কাছে মন্তব্য করেন জহুরুল হক।

টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সোহাগ বেনারকে বলেন, “এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সীমান্তের মোবাইল কভারেজ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথম ভারত সীমান্তের প্রায় ৩২টি জেলায় একযোগে এটা করা হলো।”

“তবে আমাদের অপারেটরগুলোর কভারেজ ভারতের অভ্যন্তরে বড়জোর তিন-চার কিলোমিটার পর্যন্ত ঢোকে; আর ভারতীয় রিলায়েন্সসহ বেশ কিছু কোম্পানির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দশ কিলোমিটার পর্যন্ত পাওয়া যায়। সেগুলো কিন্তু বন্ধ হয়নি,” বলেন তিনি।

তাঁর মতে, সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় অপারেটরদের নেটওয়ার্ক কভারেজ বন্ধ করা না হলে বিটিআরসির এই উদ্যোগের সুফল মিলবে না।

“এক্ষেত্রে আমরা ভারতের সহযোগিতা কামনা করতে পারি,” বেনারকে বলেন মেজর জেনারেল (অব.) রশীদ।

বিটিআরসির নির্দেশনার ফলে চার অপারেটরের প্রায় দুই হাজার বিটিএস (বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন) বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক বাংলাদেশি গণমাধ্যম।

বিটিআরসি কর্মকর্তা জাকির বেনারকে বলেন, “প্রতিটি টাওয়ারে এই ‘বিটিএস’ থাকে, যা ‘সিগন্যাল রিসিভ’ এবং ‘একচেঞ্জ’ করে। এগুলো বন্ধ করার মাধ্যমেই নেটওয়ার্ক কভারেজ বন্ধ করা হয়।”

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভে গত দুই সপ্তাহে দেশটিতে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায় বার্তাসংস্থা এএফপি।

এছাড়া গত দুই মাসে ঝিনাইদাহে ভারত থেকে প্রবেশকারী সাড়ে তিনশ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে সেদেশে গিয়েছিলেন বলেও জানায় এএফপির ওই প্রতিবেদন।

এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের (আইসিএলডিএস) নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রশীদ বলেন, “এক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তার ঝুঁকি-তো আছেই।”

"মোবাইল কভারেজ নিয়ন্ত্রণ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে," উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর আগে মিয়ারমান সীমান্তেও আমরা দেখেছি পারাপারকারীরা মোবাইলে যোগাযোগ করে সীমান্তরক্ষীদের অবস্থান বা গতিবিধি জেনে যায়।”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দৈর্ঘ্য চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার, যা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।