সাত দশক পর বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
2019.03.29
ঢাকা
সত্তর বছর পর আবার চালু হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশটির সাথে সড়ক, রেল, বিমান ও পানিপথে যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
দীর্ঘ দিন পরে দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার এই উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকেরা।
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে ৮৬ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বাংলাদেশি জাহাজ এমভি মধুমতি। একইদিনে কলকাতা থেকে আরেকটি জাহাজ আরভি বেঙ্গল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজ চলাচল উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
জাহাজটি চাঁদপুর, বরিশাল, মংলা, আংটিহারা হয়ে ৮৯৬ কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রম করে আগামী পহেলা এপ্রিল কলকাতার হলদিয়া পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ থেকে যাত্রী প্রতি জাহাজ ভাড়া আসনভেদে দেড় হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাত্রীরা তাঁদের পছন্দমতো খাবার ও পানীয় কিনে খেতে পারবেন।
জাহাজ সেবা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “সত্তর বছর পর আবার চালু হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল। এটি একটি নতুন ইতিহাস যা নৌ-পথে আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
“দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও নদীবিধৌত দক্ষিণাঞ্চলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে কলকাতা যাবেন,” তিনি বলেন।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আমরা পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজটি পরিচালনা করে দেখছি। অর্থনৈতিকভাবে চলাচলযোগ্য হলে আমরা সেবাটি নিয়মিত করার ব্যবস্থা করব।”
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, “এটি এখন ভারতে শুরু হচ্ছে। ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।”
জাহাজের যাত্রী এফ রহমান বেনারকে বলেন, “জাহাজটিতে আমার ভ্রমণ করার কারণ হলো, আমি খুব কম খরচে পুরো দক্ষিণাঞ্চলসহ সুন্দরবন এবং পশ্চিমবঙ্গের নদীপথ দেখতে পাব। আমি খুব আনন্দিত। ভবিষ্যতে আবার এ জাহাজে ভ্রমণ করব।”
ইতিবাচক পদক্ষেপ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে সরাসরি যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল একটি খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ। সত্তর বছর পর পুনরায় সরাসরি যাত্রীবাহী জাহাজ চালু হলো।”
“ভারত বিভাগের আগে আমাদের এই অঞ্চল ও কলকাতার মধ্যে সরাসরি যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করত। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়,” বলেন তিনি।
ড. দেলোয়ার বলেন, এখন ভারতের সাথে আমরা সড়ক, রেল, বিমান ও পানিপথে যুক্ত হলাম। তবে, দেখতে হবে এই অর্থনৈতিকভাবে এই জাহাজ চলাচলযোগ্য কি না।
তিনি বলেন, “এই জাহাজ পরিচালনার সাথে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তাছাড়া, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি সহজ করতে হবে যাতে যাত্রীরা হয়রানি বোধ না করেন।”
ড. দেলোয়ার বলেন, “নিয়মিত চলাচল করলে, উন্নত সেবা দেয়া গেলে সরাসরি জাহাজ খুবই জনপ্রিয় হবে। কারণ, এটি শুধু চলাচল নয়। এটি পর্যটনও বটে। তাছাড়া, ঢাকা-কোলকাতা রুটের কিছু অংশে রাস্তার অবস্থা বেহাল।”
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বৃদ্ধির অংশ হিসাবে নদীপথে সরাসরি যাত্রীবাহী জাহাজ চালুর উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে এব্যাপারে দুদেশের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রতিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষরিত হয়। এসওপি স্বাক্ষরের পাঁচ মাসের মাথায় শুরু হলো এই জাহাজ চলাচল।