ট্রেনে বাংলাদেশি নারীর শ্লীলতাহানি, বিএসএফ সদস্য গ্রেপ্তার

পরিতোষ পাল
2018.01.23
কলকাতা
কলকাতা স্টেশনে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের জন্য আন্তর্জাতিক টার্মিনাল পাহারায় বিএসএফ জওয়ানরা। কলকাতা স্টেশনে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের জন্য আন্তর্জাতিক টার্মিনাল পাহারায় বিএসএফ। ৯ নভেম্বর ২০১৭।
বেনারনিউজ

কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে চালু মৈত্রী এক্সপ্রেসে সোমবার এক বাংলাদেশি নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পূর্ব রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার রবি মহাপাত্র বেনারকে এই খবর নিশ্চিত করে বলেন, “ইতিমধ্যেই গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) এবং পূর্ব রেলওয়ে আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করেছে।”

“মৈত্রী এক্সপ্রেসে এক মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনা তদন্ত করে দেখা গেছে ৯৯ ব্যাটালিয়নের জওয়ান বীরান্না ভবি এর সঙ্গে যুক্ত ছিল,” বেনারকে জানান বিএসএফ দক্ষিণ এর ডিআইজি আর পি এস জয়সওয়াল।

“তাকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ নির্ধারিত সময়ে কলকাতা স্টেশন থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ফার্স্ট ক্লাস এসি কামরার যাত্রী এক বাংলাদেশি নারী শৌচাগারে গিয়েছিলেন। সেই সময়ই ট্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ জওয়ান বীরান্না তাঁর শ্লীলতাহানি করে। একপর্যায়ে ধ্বস্তাধ্বস্তিও হয় দুজনের মধ্যে।

ওই নারী ফিরে এসে তাঁর স্বামীকে ঘটনা জানালে তিনি তা ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক পি কে তরফদারকে জানান।

পরে টিকিট পরীক্ষকের পরামর্শে গেদেতে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী।

“এই ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। নির্যাতিতা মহিলা অবশ্য অভিযোগের প্রতিলিপি নিয়ে সেই ট্রেনেই সপরিবারে ঢাকা ফিরে যান,” বেনারকে বলেন পি কে তরফদার।

গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা থেকে কলকাতায় সপরিবারে বেড়াতে এসেছিলেন ওই নারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বামী, সন্তান ও দেবর।

মৈত্রী এক্সপ্রেসে এই প্রথম

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ২০০৮ সালের বাংলা নববর্ষে চালু হয় কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে সরাসরি আন্তর্জাতিক যাত্রী ট্রেন। নাম রাখা হয় মৈত্রী এক্সপ্রেস। এর পর গত বছর চালু হয় কলকাতা ও খুলনার মধ্যে আরেকটি ট্রেন। সেটির নাম দেওয়াহয় বন্ধন এক্সপ্রেস।

কলকাতা স্টেশনে কর্মরত এক রেলওয়ে অধিকারিক বেনারকে বলেন, মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পর থেকে গত ১০ বছরে বিক্ষিপ্ত দুটি ঘটনা ছাড়া বড় কোনো অঘটন ঘটেনি।

২০১৫ সালে মৈত্রী এক্সপ্রেসে বাংলাদেশের ঈশ্বরদীর কাছে বোমা নিক্ষেপ ও ২০১৭ সালে গাজিপুরের কাছে একটি লেভেল ক্রসিংয়ে একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু চলন্ত ট্রেনে যাত্রীর শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর ঘটনা এই প্রথম ।

এই ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কের ভাবমূর্তি চোট খাবে বলে অনেকে মনে করলেও পশ্চিমবঙ্গের ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক ইমানুল হক অবশ্য এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে চান।

“নিঃসন্দেহে এটি অবাঞ্ছিত ঘটনা। বেদনাদায়ক তো বটেই” বেনারকে বলেন ইমানুল হক।

সাবেক পূর্ববঙ্গের বাসিন্দা গৌরীপদ বিশ্বাস এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বেনারকে বলেছেন, “ট্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদের একজনের হাতে মহিলা যাত্রীর নির্যাতিতা হওয়ার ঘটনাকে মোটেই লঘু করে দেখা উচিত হবে না। বরং যাত্রী নিরাপত্তার ব্যাপারে রেলওয়েকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।”

মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তা

রেল পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, দুই মাস আগে পর্যন্ত ভারতীয় অংশে মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ)। কিন্তু গত নভেম্বরে এই ট্রেনের প্রান্তিক স্টেশনে ইমিগ্রেশন ও শুল্ক পরীক্ষা চালুর পর থেকে চলন্ত মৈত্রী ট্রেনের নিরাপত্তায় ভারত সরকার বিএসএফকে নিয়োগ করেছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক ট্রেনে একজন বিদেশির সঙ্গে অনভিপ্রেত ঘটনাটি হওয়ায় জিআরপির তদন্ত সত্ত্বেও রেলওয়ে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

“এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য রেলওয়ে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে,” বেনারকে বলেন রবি মহাপাত্র।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।