অর্ধ শতাব্দি পর আবার চালু হচ্ছে খুলনা-কলকাতা ট্রেন

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.06.08
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
খুলনা-কলকাতা রুটে দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। খুলনা-কলকাতা রুটে দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এপ্রিল ০৮, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

অর্ধ শতাব্দির বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামী ৩ আগস্ট থেকে আবার শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের খুলনার সঙ্গে ভারতের কলকাতার সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন যোগাযোগ।

“প্রারম্ভিকভাবে খুলনা-কলকাতা ট্রেনটি সপ্তাহে একদিন, বৃহস্পতিবার, চলবে। যাত্রী চাহিদা বেশি থাকলে ভবিষ্যতে আরও ট্রেন পরিচালনা করা হবে,” বেনারকে বলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।

তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগযোগ বাড়বে।”

কলকাতার পূর্ব রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বেনারকে জানান, আগামী ৩ আগস্ট থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ট্রেনটি সকাল ৭-১০ মিনিটে কলকাতা স্টেশন ছেড়ে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে যশোর হয়ে খুলনায় পৌঁছাবে বেলা এগারোটা নাগাদ। একই দিনে ট্রেনটি বেলা ২টায় খুলনা ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পৌঁছাবে কলকাতা স্টেশনে।

খুলনা-কলকাতার মধ্যে ১৭৫ কিলোমিটার দূরত্বের প্রায় ৯৬ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে বলে বেনারকে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী পরিচালক কালিকান্ত ঘোষ।

সর্বশেষ ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খুলনা-কলকাতা ট্রেনটির ট্রায়াল উদ্বোধন করেন।

পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি পরিচালনা সম্ভব বলে দুই দেশের কর্মকর্তারা মতামত দেওয়ার পর খুলনা-কলকাতা ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বেনারকে জানান রেলমন্ত্রী।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর খুলনা-কলকাতা ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও এত দিন ট্রেনটি চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দশ বছর আগে ঢাকা-কলকাতা ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয়, যেটি চলমান রয়েছে।

“কলকাতা ও খুলনার মধ্যে আগে যে ট্রেনটি চলাচল করত সেটি বরিশাল এক্সপ্রেস নামে পরিচিত ছিল। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল হয়ে খুলনা পর্যন্ত যেত। ট্রেনে খুব ভিড় হতো। খুব জনপ্রিয় ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের কাছে,” বেনারকে বলেন বরিশালের সাবেক অধিবাসী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র দাশ।

“ভারত-পাকিস্তানের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক ভালো নয়। কিন্তু তারা দুই দেশের মধ্যে চলাচলকারী ট্রেন বন্ধ করেনি। আমাদের উচিত ছিল আরো আগেই ঢাকা-কলকাতা এবং খুলনা-কলকাতা ট্রেনগুলো চালু করা,” বেনারকে বলেন দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থা সার্কের সাবেক মহাসচিব কিউ এ এম এ রহিম।

“দ্বিতীয় এই মৈত্রী এক্সপ্রেস বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে চলাচল করবে,” জানান রবি মহাপাত্র।

তবে ট্রেনটির নাম এবং ভাড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি হয়নি বলে বেনারকে জানিয়েছেন কালিকান্ত ঘোষ।

তিনি বলেন, “ট্রেনটিতে ৪৫৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসন থাকবে। খুব অচিরেই এ দুটো বিষয় (নাম ও ভাড়া) ঠিক হয়ে যাবে।”

এ প্রসঙ্গে রবি মহাপাত্র বলেন, “সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনটিতে চারটি এসি চেয়ার কোচ ও চারটি কেবিন কোচ থাকবে।”

প্রসঙ্গত, চলমান কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসটি গেদে-দর্শনা সীমান্ত দিয়ে চলাচল করে।

২০০৮ সালের পয়লা বৈশাখে ১৯৬৫ সাল বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা-কলকাতা ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রথমে ট্রেনটি অজনপ্রিয় থাকলে ও কয়েক বছর পর তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে ট্রেনটির শতকরা আশি ভাগ সিট বিক্রি হয়ে যায় খুব সহজেই।

“আমার বাবাকে মেডিকেল চেক-আপের জন্য কলকাতা নেওয়ার দরকার ছিল। তাকে বাসে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। আমরা খুলনা থেকে ট্রেনে প্রথমে ঢাকা আসি। এরপর দুই দিন অপেক্ষা করে মৈত্রী ট্রেন ধরে কলকাতা যাই,” খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র আসিফ আলী বেনারকে বলেন।

“এই ট্রেন চালু হওয়ার ফলে খুলনা, যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এলাকার যাত্রীদের বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় করে আর ঢাকা এসে ঢাকা-কলকাতা ট্রেন ধরতে হবে না। তারা খুব সহজেই অল্প সময়ে কলকাতা যাওয়া-আসা করতে পারবেন,” বেনারকে বলেন রেলমন্ত্রী।

“খুলনায় এখনো অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। এই ট্রেন চালু হলে তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ অনেক সহজ হয়ে যাবে,” বেনারকে বলেন এক সময়ে পূর্ববঙ্গের বাসিন্দা বীভা রাণী সাহা।

ঢাকা-কোলকাতা ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস ব্যাপক জনপ্রিয় ‍হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারত সরকার খুলনা-কলকাতা ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান কালিকান্ত ঘোষ।

গত ২৩-২৫ মে ভারত ও বাংলাদেশের রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কলকাতায় এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেই বৈঠকেই ৩ আগস্ট থেকে কলকাতা ও খুলনায় মধ্যে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।

“ভবিষ্যতে ট্রেনটি যশোরে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য থামবে,” বলেন কালিকান্ত ঘোষ।

এদিকে আগামী পয়লা জুলাই থেকে ঢাকা-কলকাতা ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের আর সীমান্তবর্তী দর্শনা ও গেদে স্টেশনে কাস্টমস পরীক্ষার জন্য মালামাল নামাতে হবে না বলেও জানান তিনি।

“যাত্রীরা যখন ট্রেনে উঠবেন তখনই কাস্টমস পরীক্ষা শেষ হবে। যাত্রা শেষে তারা মালামাল নিয়ে গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন,” বলেন কালিকান্ত ঘোষ।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কলকাতা থেকে পরিতোষ পাল

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।