জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইতালি

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.11.11
 রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ইতালি ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। নভেম্বর ১০, ২০১৬।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে ইতালি। একই সঙ্গে জঙ্গি দমনে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থায় সন্তোষও প্রকাশ করেছে দেশটি।

গত বৃহস্পতিবার এক দিনের ঢাকা সফরে এসে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে পাশে থাকার বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন ইতালির উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিনেটর বেনদেত্তো দেল্লা ভেদোভা।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নয় ইতালীয়সহ ২০ জন নিহত হওয়ার পরে ইতালির কাছ থেকে এমন আশ্বাসকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। এর আগে গুলশান এলাকায় ইতালির আরও একজন নাগরিক সিজার তাবেলা নিহত হন।

একদিনের বাংলাদেশ সফরে এসে ইতালির উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। শুক্রবার সকালে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করেন তিনি।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকল রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর মোকাবিলা করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন।

সরকারি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি গুলশান হামলায় নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডে তারা মর্মাহত। তবে হামলা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে জঙ্গি দমন করেছে তার প্রশংসাও করেন তিনি।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিশেষ হামলার পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার কথা জানান।

এ ছাড়া পৃথক ঘটনায় গুলশান এলাকায় ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার অগ্রগতি সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করেন।

বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেনারকে বলেন, “গুলশান হামলার পরপরই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ সরকারের তড়িৎ ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কে জেনে ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।”

বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয় বলেও জানান তিনি।

সন্ত্রাসবাদে জড়িত কাউকে ক্ষমা নয়: প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার বিকেলে ইতালির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের মত অপরাধের সঙ্গে জড়িত কাউকে ক্ষমা করা হবে না।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিবাদের হোতা এবং অর্থ ও অস্ত্রদাতাদের খুঁজে বের করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

নাগরিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে সফর

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খানিকটা পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই একদিনের জন্য বাংলাদেশি এসেছিলেন ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর এ সফরের মূল উদ্দেশ্য নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, “ইতালি বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। এ দেশে ইতালির বেশ কিছু নাগরিক কাজ করছেন। সিজার তাবেলা ও গুলশান হামলার পরে স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ইতালি সরকার এক ধরনের চাপে রয়েছে। মূলত সেসব ইতালির নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে জানাটাই এ সফরের মূল উদ্দেশ্য। ”

ইতিবাচক বলছেন বিশ্লেষকেরা

গুলশান হামলা পরবর্তী সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইতালির এগিয়ে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “সন্ত্রাসবাদের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে বাংলাদেশ সরকারের হাত ছিল না। এটি এমন একটি ঘটনা, যাতে পৃথিবীর অনেক দেশই আক্রান্ত।”

​তিনি বলেন, এখানে বাংলাদেশকে আলাদা করে দায়ী করার কোন সুযোগ নেই। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার প্রশংসা করছে ইতালি। দেশটি বাংলাদেশের সমস্যাগুলো অনুধাবন করেছে এবং নির্মোহভাবে দেখছে।

ড. দেলোয়ার বলেন, অনেক দেশ আছে, বিভিন্ন ধরনের কূটনৈতিক সুবিধা বা চাপ সৃষ্টির জন্য এগুলোকে তারা ইস্যু করতে চেয়েছে। সেখানে ইতালি এ ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখে বাংলাদেশের পাশে থাকার আন্তরিকতা দেখাচ্ছে, এটা ইতিবাচক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।