২৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বালিশ পাচ্ছেন কয়েদিরা

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.07.19
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
২৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বালিশ পাচ্ছেন কয়েদিরা-1 পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা, ৩ নভেম্বর ২০১৫।
ছবি: বেনার নিউজ

জেলাখানার জীবন কিছুটা আরামদায়ক করতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বন্দীদের বালিশ সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

ব্রিটিশ সরকারের আমলে ১৭৭৮ সালে নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো জেলখানা স্থাপনের ২৩০ বছর পর কয়েদিরা বালিশ পাচ্ছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

মন্ত্রী বলেন, “আমরা কারাগারগুলোকে সংশোধন কেন্দ্রে পরিণত করতে চাই। আর তাই বন্দীদের ঘুমানো আরামদায়ক করতে বালিশ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। একজন বন্দী আরামে ঘুমাতে না পারলে তার সংশোধন হওয়ার সুযোগ কমে যেতে পারে।”

মন্ত্রী বলেন, “আমরা ক্রমান্বয়ে দেশের কারাগারগুলোকে আরামদায়ক করবো।”

কারা অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তারা কিছু বালিশ ক্রয় করেছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সকল জেলখানাগুলোতে বালিশ দেওয়া হবে।

বর্তমানে বন্দীরা তিনটি মোটা কম্বল পান। একটি মেঝেতে বিছানোর জন্য। আরেকটি গায়ে দেওয়ার জন্য। আর অপরটি ভাঁজ করে বালিশ হিসাবে ব্যবহারের জন্য।

তবে বালিশ দেওয়া হলেও বন্দীরা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাতে পারবেন সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, দেশের ৬৮টি কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দী অবস্থান করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্য কর্মকর্তা শরীফ অপু বেনারকে বলেন, দেশের সকল কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩৬ হাজার। এই ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে বন্দী আছেন ৮৯ হাজারের মতো।

তিনি বলেন, মে মাসে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে মাদক সংক্রান্ত মামলায় আটক রয়েছে ৩৭ হাজারের বেশি বন্দি।

অপু বলেন, কারাগারগুলোতে বালিশ দেওয়া হলেও কোন বালিশ কভার বা চাদর দেওয়া হবে না। কারণ বালিশের কভার দিয়ে এক বন্দী অন্য বন্দীকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করতে পারে।

চুরির মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই মাস জেল খেটেছেন মিরপুর অঞ্চলের রিকশাচালক মো. খালেক। তিনি বেনারকে বলেন, “জেলে এক ঘরে যত লোক থাকে তাতে বালিশ রাখার জায়গা কোথায়? কয়েদির সংখ্যা না কমিয়ে বালিশ দিলেই বন্দীরা আরামে ঘুমাতে পারবে এমনটি মনে হয় না।”

২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকরের আমলে কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বেনারকে বলেন, কারাগারে একজন বন্দীর জন্য ছয় বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হয়। আর আমাদের জেলখানাগুলোর ধারণ ক্ষমতা ওই শর্তে বিবেচনা করা হয়।

তিনি বলেন, “তবে কারাগারের ব্যবস্থাপনা ভালো থাকলে, শৃঙ্খলা কঠোরভাবে রক্ষা করলে একজনের জায়গায় আরেকজনকে রাখা সম্ভব। তবে, দ্বিগুণের বেশি বন্দী রাখা হলে সেখানে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।”

তাঁর মতে, বালিশ দেওয়ার পর সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় বালিশ থেকে চর্ম রোগসহ বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, বালিশ দেওয়ার আগে আরও একটু চিন্তা-ভাবনা করা উচিত ছিলো। কারণ, বালিশ ‍দিয়ে একজন কয়েদি আরেকজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করতে পারে।

তিনি বলেন, জেলের ভেতর বন্দীরা খুব সামান্য কারণে অনেক বড় রকমের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তাই একটু ঝুঁকি তো আছেই।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।