কারাগারেই খালেদা জিয়ার আরেক মামলার বিচার শুরু

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.09.05
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
180905_khaleda_Zia_1000.jpg জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিতে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২২ জুন ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পাঁচ বছরের সাজা খাটছেন খালেদা জিয়া। এর ছয় মাসের মাথায় বুধবার জেলখানার মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি দুর্নীতি মামলার বিচার শুরু হয়েছে।

আদালতে উপস্থিত বিএনপি দলীয় এক আইনজীবীর মতে, প্রথম দিনেই খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, তিনি ভবিষ্যতে আর কোনো দিন ওই আদালতে উপস্থিত হবেন না। কারণ তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না বলে জানিয়েছেন।

এদিকে কারাগারে আদালত বসা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, কারাগারে আদালত স্থাপন সংবিধান লঙ্ঘন। কারণ, বিচার হতে হবে প্রকাশ্য আদালতে।

অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী বলছেন, কারাগারে বিচারে কোনো সমস্যা নেই।

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বেনারকে বলেন, “কারাগারে আদালত স্থাপনের আগে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার শুনানিতে হাজির হননি খালেদা জিয়া। তা ছাড়া, নিরাপত্তার কারণে কারাগারে আদালত স্থাপন সুবিধাজনক।”

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বেনারকে বলেন, “এভাবে কারাগারে আদালত বসানো অসাংবিধানিক। কারণ, সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচারকার্য হতে হবে প্রকাশ্যে। এটা আইনের পরিপন্থী, ফৌজদারি দণ্ডবিধির বিরোধী।”

তিনি বলেন, “কারাগার কখনো আদালত হতে পারে না। কারাগার কারাগারই এবং আদালত আদালতই।”

সানাউল্লাহর মতে, “খালেদা জিয়াকে দণ্ড দিতে সরকার মরিয়া। কারাগারে আদালত স্থাপন সেই আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ।”

তবে দুদকের আইনজীবী কাজল জানান, আদালতে সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, এখানে কোনো সমস্যা নেই।

সানাউল্লাহ বলেন, “আওয়ামী লীগ দ্রুত খালেদা জিয়াকে দণ্ড দিয়ে তাঁকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে চায়।”

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “আসলে নির্বাচনের আগে দণ্ড দিয়ে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার মতো সময় আর নেই।”

তিনি বলেন, “আমাদের বিচার ব্যবস্থার বিচার করলে ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে নিম্ন আদালতের রায়ের পর হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে খালেদা জিয়ার দণ্ড বহাল থাকার সম্ভাবনা নেই। আবার উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করতে পারে।”

ড. আতাউর বলেন, “সুতরাং, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য তাঁর বিচার করা হচ্ছে—বিএনপি নেতাদের এমন কথা রাজনৈতিক বক্তব্য বলে আমি মনে করি।”

তিনি বলেন, “কারাগারে আদালত স্থাপনের মাধ্যমে সরকার বিএনপিকে রাজনৈতিক চাপে রাখতে চায়। এটি আসলে রাজনৈতিক কৌশল বলা চলে। নির্বাচনের আগে বিএনপির মতো বড় দলকে সরকার কীভাবে হ্যান্ডেল করে সেটাই দেখার বিষয়।”

তিনি মনে করেন, “২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক শাসনামলে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে সংসদ ভবনে আটকে রেখে সেখানে আদালত স্থাপন করা হয়। হয়তো সেই আদলেই সরকার কারাগারে সুবিধার জন্য আদালত স্থাপন করেছে।”

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার অনুষ্ঠিত হয় পুরান জেলখানার কাছে বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা ভবনে।

মঙ্গলবার বিকেলে প্রকাশিত এক আদেশের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয় পুরোনো জেলের সাত নম্বর কক্ষকে আদালত হিসাবে ঘোষণা করে।

ওই আদেশে বলা হয়, বকশীবাজার একটি জনবহুল এলাকা। তাই নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পুরোনো জেলাখানার সাত নম্বর কক্ষকে আদালত হিসাবে ঘোষণা করা হলো।

‘যত দিন ইচ্ছা সাজা দিন’

সরকারি আদেশের পরদিন বুধবার দুপুর বারোটা দশ মিনিটে বিচারক আখতারুজ্জামান আদালতের কার্যক্রম শুরু করেন।

কিছুক্ষণ পর খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করা হয় বলে বিএনপি দলীয় আইনজীবী ও ঢাকা বারের সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান জানান।

আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাডাম আদালতকে বলেছেন, ‘আপনার যত দিন ইচ্ছা সাজা দিন, আমি এ অবস্থায় বারবার আসতে পারব না। এই আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না।”

গোলাম মোস্তফা জানান, “খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন ‘আমার বাম পা ভাঁজ হয় না। সোজা হয়ে থাকে। বাম হাতেও সমস্যা রয়েছে। আপনারা আমার মেডিকেল রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারতেন আমার অবস্থা’।”

তিনি বলেন, “আদালতে খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবী ছিলেন না। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে আদালত স্থাপনের কোনো সরকারি আদেশ খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দেওয়া হয়নি।”

তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বেনারকে বলেন, “আদালত স্থাপনের সরকারি আদেশ খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সরবরাহ করা হয়েছে। তা ছাড়া, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে কারাগারে আদালত স্থাপনের খবরটি প্রচার করা হয়েছে।”

“সুতরাং, খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের খবর জানানো হয়নি এ কথা ভুল,” বলেন তিনি।

বুধবার এ আদালতের কার্যক্রম চলে প্রায় আধঘন্টা। এরপর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ বিচারক আখতারুজ্জামান ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর মামলার নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন। পুরোনো ওই জেলে খালেদা জিয়া একমাত্র বন্দী।

জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলা

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৮ আগস্ট ২০১০ তারিখে জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় কমিশন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর শুরু হয় বিচার।

খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব (বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান এই মামলার অন্য আসামী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।