ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার অভিবাসন প্রত্যাশীদের দেশে ফিরতে হবে
2019.06.17
ঢাকা
আফ্রিকার উত্তর উপকূলে ভূমধ্যসাগর তীরের দেশ তিউনিসিয়ার সমুদ্রসীমায় উদ্ধারকারী নৌকায় আটকে থাকা ৬৪ বাংলাদেশিসহ ৭৫ অভিবাসন প্রত্যাশীকে দেশে ফিরতেই হবে। তারা বুঝতে পেরেছে, এ দফায় অন্তত আর ইউরোপ যাওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. তারিকুল ইসলাম সোমবার বেনারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গিয়ে ওই নৌকায় ভাসমান বাংলাদেশিদের সাথে দেখা করেছেন। তাঁদের প্রত্যেককে আলাদা করে দেশে ফেরার বিষয়ে বুঝিয়েছেন।”
“শুরুতে রাজি না হলেও পরে তারা পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছে, যেহেতু সেখানকার (তিউনিসিয়ার) কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়েছে, অবৈধ পথে ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ আপাতত আর নেই। তাদের সরাসরি বাংলাদেশেই ফিরে আসতে হবে,” যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় গত ৩১ মে থেকে তিউনিসিয়ার মেডিনিন রাজ্যের উপকূলীয় শহর জার্জিস থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ভাসছে অভিবাসী বহনকারী মিসরীয় নৌকাটি। সেখানে গিয়েই তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দার আলী।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই তিউনিসিয়া সফরকারী রাষ্ট্রদূত দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, মেদিনিন প্রদেশের গভর্নর এবং জার্জিস নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তারা বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চাইতে আইওএম (জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা) এবং রেডক্রিসেন্টের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেও তিনি একই আশ্বাস পেয়েছেন।
ভেসে থাকা বাংলাদেশিদের ডাঙায় এনে পরে তাঁদের তিউনিসিয়া বিমানবন্দরে নিয়ে দূতাবাস থেকে দ্রুত ট্রাভেল পারমিট দিয়ে বিমান যোগে দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
“আশা করছি, অতি সত্ত্বর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব,” জানিয়ে আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক আরও বলেন, “আইওএম ও রেডক্রিসেন্টের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
দূতাবাস না থাকলেও তিউনিসিয়ার সাথে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক খুবই ভালো উল্লেখ করে তারিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ব্যাপারে সেখানকার প্রশাসন খুবই তৎপর।”
যদিও সর্বশেষ খবর পাওয়া অবধি নৌকার অভিবাসীরা এখনো ভেসেই আছেন। তবে ৬৪ বাংলাদেশির অনেকেই অনশন ভেঙে খাবার-পানি ও ওষুধ গ্রহণ করেছেন। তাঁদের কারও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি এখনো।
রাষ্ট্রদূত সেকান্দার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভাসমান বাংলাদেশিদের সাথে দেখা করার কথা নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষক ড. জালাল উদ্দিন শিকদার বেনারকে বলেন, “যেহেতু তারা তিউনিসিয়ার জলসীমায় আছে, তাদের উদ্ধার করা না হলে ওই দেশই কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়ে যাবে। এখন তারা এটা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুযায়ী ফয়সালা হবে, নাকি বাংলাদেশ বিষয়টা কূটনৈতিকভাবে সামলাতে সক্ষম হবে; সেটাই দেখার বিষয়।”
“আমরা যদি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হই, তবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হবে যে বাংলাদেশ মানবপাচার উৎসাহিত করে। আর এটা প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার-সংক্রান্ত (টিআইপি) রেটিংয়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে পড়বে।”
তিনি আরো বলেন, “টিআইপি রেটিং-এ অবনমন হলে তা আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য খুবই নেতিবাচক হবে। অতএব মানবপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক হবে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা তারিকুলও বলেন, “দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে এ জাতীয় ঘটনা।”
ক্ষতিপূরণ চেয় রিট
গত মাসে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী বহনকারী নৌকাডুবিতে যে ৩৭ জন বাংলাদেশি মারা যান তাদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে রোববার উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়েছে।
রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদুল হক সুমন সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সি ও মানবপাচার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে স্বরাষ্ট্রসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, প্রবাসী কল্যাণ সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সিলেট ও নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে বিবাদী করা হয়েছে।
অভিবাসন গবেষক ড. জালাল বেনারকে বলেন, “এমন অনেক রিট হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ কেন পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না? কেন আমাদের বারবার গিয়ে বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে?”
উল্লেখ্য, লিবিয়ার উপকূল থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী ওই ৩৭ বাংলাদেশিও তিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে মারা যান।