সংসদ এলাকা থেকে ‘আত্মঘাতী’ হামলার পরিকল্পনাকারী এক জঙ্গি আটক
2021.05.06
ঢাকা
দেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার ‘জিহাদে’ অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের ওপর ‘আত্মঘাতী’ হামলার পরিকল্পনাকারী এক সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় ২০ বছর বয়সী ছাত্র মো. আল সাকিবসহ কয়েকজন যুবক সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, হামলার আগেই সাকিবকে আটক করে পুলিশ।
তার কাছ থেকে ইরাক-সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের প্রতীকের আদলে তৈরি সাদা কালিতে কালিমা লেখা কালো লম্বা পতাকা ও একই ধরনের কালো রুমাল উদ্ধার করা হয়েছে।
সাকিবকে আত্মঘাতী হামলায় উদ্বুদ্ধ করা উগ্রবাদী বক্তা আলী হাসান উসামাকে বৃহস্পতিবার রাজবাড়ি জেলা থেকে আটক করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শাখার উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আটক সাকিব ও উসামা দুজনেই নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল-ইসলামের সদস্য।
বুধবার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এক অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্দেহভাজনসহ দুই নব্য জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যকে গ্রেপ্তার করার খবর জানানোর পরদিনই এই দুজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার হলো।
ঘটনার পর থেকে সংসদ ভবন ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও টহল জোরদার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান সংসদ সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস সিরাজুল হুদা।
তিনি বলেন, সংসদ সচিবালয়ের নিরাপত্তার টহল টিম মূলত সাকিবকে আটক করতে ভূমিকা পালন করে। আটকের পর তাঁকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে সোপর্দ করা হয়।
তবে আল কায়েদার আদর্শের অনুসারী আনসার আল-ইসলামের সদস্যদের সাথে ইসলামিক স্টেটের পতাকার ঘটনা অস্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
এই ঘটনায় শেরে বাংলা থানায় সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আটক দুজনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ঢাকার বিচারিক আদালতে পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার উপকমিশনার জাফর হোসেন বেনারকে বলেন, সাকিব এবং উসামা প্রত্যেককে পাঁচদিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
এজাহারে যা বলা হয়েছে
মামলার এজাহারের একটি কপি বেনারের হাতে এসেছে।
এতে বলা হয় ৫ মে আনসার আল-ইসলামের কিছু সদস্য সংসদ ভবন এলাকায় সমবেত হয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের ওপর আত্মঘাতী হামলা করবে বিশ্বস্ত সূত্রে এমন সংবাদ পায় পুলিশ।
সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সংসদ এলাকায় অবস্থান নেবার পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর কাছে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন দৌড়ে পালাতে থাকে। তাঁদের একজনকে আটক করে পুলিশ, বাকিরা পালিয়ে যায়।
আটক সিরাজগঞ্জ কলেজের পদার্থ বিদ্যার ছাত্র মো. আল সাকিবের বাড়ি ওই জেলার কামারখন্দ উপজেলায়।
আটকের পর তাঁর কাছ থেকে সাদা কালিতে আরবি হরফে কালিমা তৈয়িবা লেখা একটি কালো পতাকা ও একটি বড়ো রুমাল, ২৭ ইঞ্চি লম্বা একটি ছোরা এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, মোবাইল ফোনে উগ্রবাদের বার্তা সংবলিত ভিডিও প্রচারকারী আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনভি, আমির হামজা ও হারুন ইজাহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদী বার্তা সংবলিত ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আসক্ত হয় সাকিব।
আটকের পর সাকিব পুলিশকে জানান, এই সকল ব্যক্তিদের ভিডিও দেখে তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা করতে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনভিদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা তাঁকে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
এরপর সাকিব দেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে সন্ত্রাসী আক্রমণ করে আত্মঘাতী হবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সহযোগীদের সাথে ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নেন বলে জানানো হয় এজাহারে।
সাকিব নিজের ফেসবুক আইডি ও মেসেঞ্জারে তাঁর সাথে হামলায় অংশগ্রহণের জন্য অন্যদেরও আহ্বান জানান।
এজাহার অনুযায়ী, আটক সাকিব আনসার আল-ইসলামে সদস্য।
“পুলিশ বলছে আটককৃতরা আনসার আল-ইসলামের সদস্য। কিন্তু আনসার আল-ইসলামের সদস্যরা ইসলামিক স্টেটের পতাকা নেয়ার কথা নয়। কারণ সংগঠনটি আল-কায়েদার আদর্শে বিশ্বাসী,” বেনারকে বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, “কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সকল জঙ্গি সংগঠনগুলো আইএস’র আদলে রূপ নেবে। এর প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এমন ঘটনা ঘটলে অবাক কিছু নেই।”
এক্ষেত্রে তাঁর মতে, এমনও হতে পারে যে “হয়তো আনসার আল-ইসলামের মধ্যে কোনো একটি গ্রুপ আইএস’র আদর্শ গ্রহণ করে জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করেছে।”
“এ ছাড়া জঙ্গিরা অনেকসময় পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে গিয়ে মিথ্যা বলে থাকে। তবে রিমান্ড শেষে পুলিশ কী বলে সেটি দেখার বিষয়,” বলেন তিনি।