উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসলামি বক্তা আমির হামজা রিমান্ডে
2021.05.25
ঢাকা
ইসলামি বক্তা হিসাবে পরিচিত আমির হামজাকে (৩৫) আটক করেছে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
কুষ্টিয়া সদরের চৌড়হাস মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোমবার তাঁকে আটক করার কথা মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
গত ৫ মে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের ওপর হামলার সময় বড়ো ছোরাসহ আটক আনসার আল-ইসলামের জঙ্গি মো. সাকিব জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, তাঁকে আক্রমণ পরিচালনায় উৎসাহ দিয়েছেন আমির হামজাসহ আরেক ইসলামি বক্তা।
ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আমির হামজাকে হামলার পরিকল্পনাকারী বলে উল্লেখ করা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
আটকের পর মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হলে তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “আমির হামজা এ মামলার আসামি আনসার আল ইসলামের সদস্য মো. আল সাকিবসহ অন্যদের তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং হামলার বিষয়ে ইন্ধন দিয়েছেন।”
“আমির হামজার কথিত উগ্রবাদী বক্তব্য ইউটিউবে দেখে এর আগে গ্রেপ্তার আসামি সাকিব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করে পুলিশের গুলিতে শহীদ হবে মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে,” আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, আমির হামজা উগ্রবাদী বয়ানের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে “উগ্রবাদের প্রচার ও প্রসারে” লিপ্ত রয়েছেন।”
দুই আনসার আল-ইসলাম সদস্য আটক
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
২৩ মে শনিবার চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করার পর সোমবার ঢাকায় আনা হয়।
আটককৃত দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি মোঃ আব্দুল্লাহ (২৬) ও আনোয়ার হোসেন (৪৮)। এরা দুজনও সংসদ ভবনে ব্যর্থ হামলা মামলার আসামি।
কাউন্টার টেরোরিজম জানায়, আব্দুল্লাহ একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তিনি মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসার আড়ালে আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কারাগারে আটক সদস্যদের জামিন, অর্থ সংগ্রহ, সংগঠনের প্রচার ও নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য কাজ করতেন আব্দুল্লাহ।
এই মামলার এজাহারভুক্ত অভিযুক্ত হারুন ইজাহার এর নির্দেশে আব্দুল্লাহ ও আনোয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বলে জানায় পুলিশ।
আব্দুল্লাহ ও আনোয়ারকে চারদিন করে পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রংপুরে খাদেম হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আটক
রংপুরের কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম রহমত আলীকে কুপিয়ে এবং জবাই করে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গি চান্দু মিয়া (২৫) ওরফে আব্দুর রহমানকে পাঁচ বছরের বেশি সময় পরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাতে হত্যার পর থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এই জঙ্গি। এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে ২০১৮ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির মধ্যে সবাই ধরা পড়লেও আব্দুর রহমান ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার সাভার থেকে তাঁকে আটক করা হয় বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানান পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান।
রহমত আলীকে হত্যার কারণ, তিনি তাঁর বাড়ির পাশে বাবা-মায়ের কবরকে মাজার ঘোষণা করে সেখানে একটি দরবার শরীফ স্থাপন করেন।
রহমত আলী শরীয়তপুরের সুরেশ্বরী তরিকা পালন করতেন। ইসলামের এই তরিকা সহিংসতার বিরুদ্ধে। প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি এই দরবার শরীফে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে জিকির করতেন।
আসলাম খান বলেন, চান্দু মিয়ার জন্ম ১৯৯৬ সালে। সে একটি স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিল। জেএমবি’র মতে মাজার ও জিকির সব হারাম এবং রহমত আলীকে হত্যা করা তার “ঈমানী দায়িত্ব” হয়ে দাঁড়ায়। তাই জেএমবি’র জঙ্গিরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে কুপিয়ে এবং পরে জবাই করে হত্যা করে।
পুলিশ আদালতে এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই। ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ রংপুরের আদালত এই মামলার ১৩ আসামির মধ্যে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এই সাতজনের ছয়জনকে পুলিশ আটক করতে পারলেও চান্দু মিয়া ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আসলাম খান বলেন, “চান্দু মিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে, দিন মজুরের কাজ করে জীবনযাপন করত। সে কুমিল্লা গিয়ে বিয়ে করেছে। আর আমরা এই বিয়ের সূত্র ধরে তাকে বের করতে সমর্থ হই।”
“বয়স কম হলেও চান্দু মিয়া আমাদের খুব ভুগিয়েছে। একে ধরাই যাচ্ছিল না,” বলেন আসলাম খান।
তিনি বলেন, এটিইউ তাকে রংপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে এবং রংপুর পুলিশ তাঁকে আদালতে উপস্থাপন করবে।