নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ দুই জঙ্গি আটক
2020.08.28
ঢাকা
পৃথক অভিযানে ঢাকা ও রাজশাহী থেকে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার শিব্বির আহমাদ (২২) নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ।
এ ছাড়া রাজশাহী শহর থেকে আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার-আল ইসলামের সদস্য ইসমাইল হোসেনকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। দুজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে শিব্বির আহমাদকে রাজধানীর সবুজবাগ থানার পূর্ব বাসাবো এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার বেনারকে এই তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম।
তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোন, জিহাদি পুস্তক ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
সবুজবাগ থানায় শিব্বিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার তাঁকে আদালতে পাঠানো হয় বলে জানান ডিএমপির উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন।
সিটিটিসি জানায়, শিব্বির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিলেন।
নব্য জেএমবি প্রতিষ্ঠার শুরুতে যুক্ত হয়ে সংগঠনের মিডিয়া উইংয়ে কাজ করা শিব্বিরের সংগঠনটির এক সময়কার আমির মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে জানায় সিটিটিসি।
তবে শিব্বির আহমাদের মামা ও শরণখোলার সুন্দরবন ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জামাল হোসেন ফরাজি বেনারকে বলেন, “শিব্বির পবিত্র কোরআনের একজন হাফেজ ও অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবাও স্থানীয় এক পুলিশ ফাঁড়ির মসজিদের ইমাম।”
“অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির ও ধর্মপরায়ণ ছেলেটি কখনো জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। আমরা ধারণা করছি সে ষড়যন্ত্রের শিকার,” জানান জামাল হোসেন।
তিনি জানান, ঢাকার মতিঝিল এলাকার একটি মসজিদে ইমামতি করতেন শিব্বির। গত কোরবানির ঈদের আগে সেখানেই এক বাড়িতে তাঁকে মিলাদ পড়ানোর জন্য ডাকা হয়। কিন্তু সেখানে নারীরা থাকায় লাজুক প্রকৃতির শিব্বির মিলাদ না পড়িয়ে চলে আসেন।
“তারপর সে স্থানীয় কিছু মানুষের রোষানলে পড়ে। জঙ্গিবাদের দায়ে তার আটক হওয়া এ ঘটনার জের ধরে ঘটতে পারে,” বলেন জামাল হোসেন।
জঙ্গিবাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ
২০১৬ সালের জুলাইতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গি দমনে ধারাবাহিক অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনাকারী তামীম চৌধুরী, মারজান, জাহিদুল ইসলাম, বাশারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানায় পুলিশ। তাঁদের মৃত্যুর পর সংগঠনের আমিরের দায়িত্ব পান মুসা।
২০১৮ সালে মৌলভীবাজারের বড়হাটে সিটিটিসির এক অভিযানে মুসা নিহত হন।
সিটিটিসি জানায়, মুসার মৃত্যুর পর শিব্বির কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থেকে ২০১৮ সালে আবার অনলাইনের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হন। অনলাইনে বিভিন্ন আইডি ব্যবহার করে তিনি আইএস অনুপ্রাণিত বিদেশি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতেন।
শিব্বির বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও আফগানিস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশের আইএস অনুপ্রাণিত সদস্যদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন বলেও পুলিশ জানায়।
দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদেশের বিভিন্ন নাগরিকের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করতেন শিব্বির। পুলিশের ভাষ্য, সিরিয়া ফেরত বিভিন্ন দেশের কিছু নাগরিকদের সাথেও অর্থ লেনদেন করেছেন তিনি।
সিটিটিসি আরও জানায়, শিব্বির ঢাকার বাসাবোর সাইদিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৭ সালে দাখিল পাস করে বিভিন্ন মসজিদের মুয়াজ্জিন ও সহকারী ইমামের দায়িত্বের আড়ালে উগ্রবাদি ধারণা প্রচার ও জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
রাজশাহীতে গ্রেপ্তার আনসার-আল ইসলামের সদস্য
শুক্রবার র্যাব-৫ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইসমাইল হোসেন নামে আনসার-আল ইসলামের এক সদস্যকে আটক করা হয়।
ইসমাইল খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা থানার পলাশপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে।
র্যাব জানায়, ইসমাইলের কাছ থেকে সাতটি উগ্রবাদী বই ও একটি লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে তাঁর বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
জঙ্গিরা থেমে নেই
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিবাদ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও জঙ্গিরা আসলে থেমে নেই। তাঁরা তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করেই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
জঙ্গিবাদ বিশ্লেষক নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “জঙ্গিরা কখনো থেমে ছিল না। তাদের শক্তি কিছুটা কমলেও তারা সকল অবস্থাতেই সক্রিয় থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর সময় অর্থসহ শক্তি সংগ্রহ করছে জঙ্গিরা।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেশের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা পুরোনো। সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে।”
নূর খান মনে করেন, “জঙ্গিরা অনলাইনে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছে। আর এর মাধ্যমে তরুণদের দলে টানতে সুবিধা পাচ্ছে তারা। এই তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।”