আত্মগোপনে থাকা জেএমবি নেতা উজ্জ্বল মাস্টার ঢাকায় গ্রেপ্তার

আহম্মদ ফয়েজ
2021.09.09
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
আত্মগোপনে থাকা জেএমবি নেতা উজ্জ্বল মাস্টার ঢাকায় গ্রেপ্তার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গ্রেপ্তার জেএমবি নেতা মো. এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার (মাঝখানে) ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[বেনারনিউজ]

রাজধানীর বছিলা এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তার জঙ্গি নেতা মোঃ এমদাদুল হক (৫৫) ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারকে জেএমবি’র একটি গ্রুপের কর্ণধার বলে দাবি করেছে র‌্যাব। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত সপ্তাহে ময়মনসিংহ থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওই দলেরই প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন উজ্জ্বল মাস্টার। 

“গত ২ সেপ্টেম্বর নিজেকে প্রিন্টিং প্রেসের কর্মী পরিচয় দিয়ে বছিলার ওই বাসায় ওঠে উজ্জ্বল মাস্টার। মূলত গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন করাই ছিল তার লক্ষ্য,” বলেন মঈন। 

সংবাদ সম্মেলনে মঈন বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রায় ৫০ সদস্যের একটি জঙ্গি দলের নেতৃত্ব দিয়ে তাঁদের নতুন করে সংগঠিত করছিলেন উজ্জ্বল মাস্টার। 

ময়মনসিংহের জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হবার পর থেকেই অভিযান চালিয়ে আসছিল র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বছিলার বাড়িটিতে অভিযান পরিচালনা করে উজ্জ্বল মাস্টারকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।

“অভিযানে জব্দ করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গোলাবারুদ, নগদ তিন লক্ষাধিক টাকা, রাসায়নিক দ্রব্য, অভিনব পদ্ধতিতে তৈরিকৃত দেশীয় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, উগ্রবাদী বই ও লিফলেট ইত্যাদি,” বলেন মঈন। 

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উজ্জ্বল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। 

র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহের একটি কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ১৯৯৫ সালে স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন উজ্জ্বল। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় তিনি চাকুরিচ্যুত হন।

এরপর ২০০২ সালে মুক্তাগাছায় সফররত এক জঙ্গি নেতার বয়ান শুনে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরবর্তীতে শায়খ আব্দুর রহমানের কাছ থেকে বায়াত নিয়ে জামালপুরে একটি আস্তানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ময়মনসিংহের একজন আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। 

“সে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও সালাহউদ্দিন সালেহীনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল। গ্রেপ্তারকৃত উজ্জ্বল মাস্টার জেএমবি শীর্ষ নেতাদের ময়মনসিংহে সফরকালীন সময়ে বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকত। উপরোক্ত নেতাদের গোপন আস্তানায় অবস্থান, মিটিং ও বয়ান আয়োজনে ভূমিকা রাখত,” বলেন মঈন। 

অর্থ জোগাড়ে ডাকাতি

সংগঠনকে চাঙ্গা করতে জঙ্গিরা সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মঈন জানান, অর্থ সংগ্রহের জন্য জঙ্গিরা “লুট, ছিনতাই ও ডাকাতি”ও করে থাকে। 

ময়মনসিংহে গ্রেপ্তার হওয়া সবাই সক্রিয়ভাবে ডাকাতিতে যুক্ত ছিল বলেও জানান তিনি। 

উজ্জ্বল মাস্টার ২০০৩ সালে মুক্তাগাছার একটি ব্রাক অফিসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত জানিয়ে বলা হয়, নাশকতা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাঁর নামে ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। 

তালেবান উত্থানে উজ্জীবিত জঙ্গিরা! 

সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানের পর বাংলাদেশের উগ্রবাদী গ্রুপগুলো কিছুটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে আগের তুলনায় নজরদারি বাড়িয়েছে বাহিনীগুলো। 

পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে ১৫ সন্ধেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই জঙ্গিরা জেএমবি ও আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য। এদের বেশিরভাগই নতুন করে সক্রিয় হয়ে সংগঠিত হবার চেষ্টা করছিল। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের সভাপতি এ এন এম মনিরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “আফগানিস্তানে তালেবান সাফল্য পাওয়া মাত্রই এই দেশের জঙ্গিরা নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে, এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।”

“আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর উচিত হবে নজরদারি বাড়ানো এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা,” বলেন তিনি। 

সাবেক পুলিশ প্রধান ও বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, “যেহেতু আমাদের দেশ থেকে অতীতে আফগানিস্তানে এবং ফিলিস্তিনে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়ার রেকর্ড আছে, সেহেতু এটা বলাই যায়, আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান এখানে জঙ্গিদের উজ্জীবিত করে।”

“সবেমাত্রই তালেবানের উত্থান হওয়ায় সেই মতাদর্শের লোকেরা এখন একটু বেশি তৎপর থাকবে। তাই আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এই সময়ে বেশি সক্রিয় হবার বিকল্প নেই,” বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। 

গত ১৪ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তালেবানের পক্ষ থেকে আফগানিস্তান যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।” 

“বাংলাদেশ থেকে কিছু মানুষ ইতিমধ্যে তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, কিছু মানুষ ভারতে ধরা পড়েছে, আর কিছু হেঁটে বিভিন্নভাবে আফগানিস্তানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি। 

জঙ্গিরা অনলাইনে কর্মী সংগ্রহ ও উদ্বুদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।