পুলিশকে ছুরিকাহত করার সময় জঙ্গি নারী গ্রেপ্তার

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.02.13
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
জঙ্গি হামলার বর্ষপূর্তিতে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির সামনে পুলিশ পাহারা। জঙ্গি হামলার বর্ষপূর্তিতে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির সামনে পুলিশ পাহারা। এই বেকারিতে জিম্মি করে আগের বছর নব্য জেএমবির জঙ্গিরা বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। ১ জুলাই ২০১৭।
AP Photo

বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ছুরিকাঘাত করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে আসমাহুল হুসনা সুমনা নামে এক নারী। সুমনা অস্ট্রেলিয়ায় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে আটক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছাত্রী মোমেনা সোমার (২৪) বোন। সোমবার রাতে তাঁদের রাজধানীর কাজীপাড়ার ফ্ল্যাটে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাঁর বাবা।

সোমা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। সে ও তার বোন বাংলাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করতে বদ্ধপরিকর বলে পুলিশকে জানিয়েছে সুমনা।

“সুমনা নব্য জেএমবি’র একজন সক্রিয় সদস্য। পুলিশকে ছুরিকাহত করার ঘটনায় ঢাকার কাফরুল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে,” বেনারকে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান।

আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এজাহারে যা বলা হয়েছে

কাফরুল থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্নে একজন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে ছুরিকাহত করার দায়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছাত্রী মোমেনা সোমা (২৪) গ্রেপ্তার হন।

সেই সূত্র ধরে বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের কাজীপাড়ার ফ্ল্যাটে যান সোমা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে। তাঁর বাবা পুলিশকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন।

তবে পুলিশকর্তারা সোমার ছোট বোন আসমাহুল হুসনা সুমনার কথাবার্তা ও আচরণ সন্দেহজনক বলে ধারণা করেন। তাঁদের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পরদিন মঙ্গলবার সুমনাকে নিয়ে কাউন্টার টেররিজম বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর বাবাকে বলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

তবে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পাশের রুমের ভিতর থেকে চাকু হাতে নিয়ে “আল্লাহু আকবর’, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু’ ধ্বনি দিতে দিতে এসে সহকারী কমিশনার তোহিদুল ইসলামকে চাকু দিয়ে আক্রমণ করতে থাকে সুমনা।

উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সুমনাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় সুমনা চিৎকার করে বলতে থাকে “তোমরা কাফের। দেশে ইসলামী শাসন কায়েম করতে হবে। প্রয়োজনে জিহাদ করতে হবে।”

এজাহারে আরও বলা হয়, সুমনা পুলিশকে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে যে, সে ও অস্ট্রেলিয়া পুলিশের হাতে আটক তার বোন সোমা নব্য জেএমবি’র অনুসারী। অনলাইন ভিত্তিক ভিডিও এবং ফেসবুক পেজ দেখে তথাকথিত জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয় তারা।

সে আরও জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় তার বড় বোন অস্ট্রেলিয়াতে শিক্ষাবৃত্তি নিতে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। তার পরিচিত আরও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন একই আদর্শে বিশ্বাসী এবং তারা দেশে সশস্ত্র জিহাদ করাসহ রাষ্ট্র বিরোধী নাশকতামূলক বিভিন্ন পরিকল্পনা করে আসছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, সুমনা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হয়ে সংগঠনকে সমর্থনপূর্বক তথাকথিত জিহাদি কার্যক্রমে প্ররোচিত হয়ে অপরাধ সংঘটিত ও ষড়যন্ত্র করায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৮/৯/১০ ও ১৩ ধারায় অপরাধ করেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি কাফরুল থানায় সুমনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, তারা সুমনার বাসা তল্লাশি করে একটি চাকু, একটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল উদ্ধার করে।

এ ছাড়া সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্য করার পরিকল্পনাও তার ছিল বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

সুমনার একজন চাচা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ডিন। তিনিসহ কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি তারা।

তবে সুমনার কয়েকজন বন্ধু বেনারকে জানান, ২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করা সুমনা ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করে। এরপর সে জিইডি নামক একটি কোর্সে ভর্তি হয়। সেই কোর্স শেষ করার পর সে বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ইংরেজি সম্মান শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

সুমনার একজন বান্ধবী জুলি বেনারকে বলেন, “ও নামাজ পড়ত নিয়মিত। যদিও তাকে কখনো আমার মনে হয়নি যে সে জঙ্গিবাদের মতো পথকে বেছে নেবে। তবে সে সব সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিল।”

আরো দুই জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার

এদিকে সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে জেএমবি’র দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন; নুরুজ্জমান লাবু (৩৯) ও নাজমুল ইসলাম শাওন (২৬) বলে এক বিবৃতিতে জানায় র‌্যাব। তাদের কাছে কিছু দেশীয় অস্ত্র, উগ্র মতবাদের বই এবং ডলার পাওয়া গেছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ারুজ্জামান বলেন, তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।