আইএস সংশ্লিষ্টতায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশি নব্য-জেএমবি
2018.02.27
ওয়াশিংটন ডিসি
বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন নব্য-জেএমবিকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বিশ্বের আরো কয়েকটি সস্ত্রাসী সংগঠনের সাথে নব্য-জেএমবিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বরাবরই দেশের ভেতরে আইএসসহ আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর উপস্থিতি অস্বীকার করে আসছেন।
আইএসকে এর ভিন্ন নাম ‘আইসিস’ হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্টার টেররিজমের সমন্বয়ক নাথান সেলিস এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ঘোষণার মাধ্যমে ইরাক ও সিরিয়াতে বিলুপ্ত খিলাফতের বাইরে আইসিস-সম্পৃক্ত উল্লেখযোগ্য সংগঠন ও নেতাদের শনাক্ত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আজকের এই উদ্যোগ আইসিস এর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিকল্পনা ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”
বাংলাদেশে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ইসলামি জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) শেখ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে এর দায় স্বীকার করে।
ওই হামলায় মাত্র দুটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও তা বাংলাদেশে জঙ্গিদের ব্যাপক উপস্থিতির বিষয়ে সকল মহলকে সজাগ করে তোলে।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে জেএমবির শীর্ষ দুই নেতা শেখ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইর ফাঁসি কার্যকর হলে বাংলাদেশে জেএমবির কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আসে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় এই জঙ্গি সংগঠনটি ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই সময় থেকেই কিছু বাংলাদেশির আইএস এর প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
এই ঘোষণায় বলা হয়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় একজন ইটালিয়ান উন্নয়নকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে এই সংগঠনের সদস্যরা।
এছাড়া ২০১৬ সালের জুলাইতে ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভায়বহ হামলাও পরিচালনা করে এই সংগঠনের সশস্ত্র জঙ্গিরা।
ওই হামলায় জঙ্গিরা বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের ২০ জন নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে পুলিশি অভিযানের সময় আক্রমণকারী পাঁচ জঙ্গির সকলেই নিহত হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ ওই হামলার জঙ্গিরা নব্য-জেএমবির সদস্য বলে জানায়। পুলিশের ভাষ্যমতে, নব্য-জেএমবি পুরোনো জেএমবি থেকে গঠিত একটি শাখা।
তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এই সংগঠনটিসহ দেশের অন্যসব জঙ্গি সংগঠনের সাথেও আইএস বা আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।
বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মতে, এরা সবই ‘দেশীয় জঙ্গি’।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার ফলে দেশটির আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এই সংগঠনগুলোর আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের এই সংগঠনগুলোকে যে কোনো ধরনের সহায়তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এই নিষেধাজ্ঞা মঙ্গলবার ঘোষিত সোমালিয়া, তিউনিসিয়া ও মিশরের আইএস সম্পৃক্ত সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
একই সাথে আইএস এর ৪০জন নেতাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ পরিচালনার জন্যও চিহ্নিত করা হয়েছে এই ঘোষণায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, ইন্টারপোল ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর জাস্টিস এর যৌথ উদ্যোগে ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএস প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলাজনিত কর্মসূচি প্রয়োগ বিষয়ে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী কনফারেন্স এই ঘোষণাটি দেওয়া হয়।
এতে বিশ্বের ৯০টির মতো দেশের আইন-শৃঙ্খলার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
“এই উদ্যোগ আইসিসের স্বর্গরাজ্যগুলোকে ধবংস করছে, বিদেশি জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ করার ক্ষমতাকে খর্ব করছে, আর্থিক সরবরাহকে সংকুচিত করছে, ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণার মোকাবেলা করছে, এবং ইরাক ও সিরিয়ার মুক্তাঞ্চলগুলোতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে,” বলা হয় বিবৃতিতে।