নারায়ণগঞ্জে নারীসহ তিন জঙ্গি গ্রেপ্তার

শরীফ খিয়াম
2018.04.18
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
নারায়ণগঞ্জ থেকে এক নারীসহ জেএমবির তিন সক্রিয় জঙ্গিকে র‍্যাব আটক করে। নারায়ণগঞ্জ থেকে এক নারীসহ জেএমবির তিন সক্রিয় জঙ্গিকে র‍্যাব আটক করে। ১৮ এপ্রিল ২০১৮।
বেনারনিউজ

নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক নারী সদস্যসহ তিন সক্রিয় জঙ্গিকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব)। নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা কেল্লা এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধরা পড়া এসব জঙ্গির মধ্যে নারী সদস্যকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেন তাঁর বাবা।

“মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর ফোর্ট (দুর্গ) এলাকায় বৈঠকে মিলিত হয়েছিল ১২-১৪ জন জেএমবি সদস্য। খবর পেয়ে আমরা (র‌্যাব) আসার আগেই বাকিরা পালিয়ে যায়,” বুধবার দুপুরে বেনারকে বলেন র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন।

আটক জেএমবি সদস্যরা হলেন; জান্নাতুল নাঈম মিতু (১৯) মেহেদী হাসান মাসুদ (২২) ও আকবর হোসেন সুমন (৩০)।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন এই গ্রেপ্তার অভিযানের সেকেন্ড ইন কমান্ড বিল্লাল হোসেন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিতুর পরিচয় হয় মেহেদি ও সুমনের সাথে।

“মেহেদির বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে, সুমনের নোয়াখালীর হাতিয়া। তারা দুজনে চট্টগ্রাম শহরে পৃথক দুটি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানিতে কাজ করত,” প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জানান সিনিয়র এএসপি বিল্লাল।

“বিশেষত মেহেদির উৎসাহ ও প্ররোচনায় জঙ্গিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মিতু। স্বামী নামাজ-কালাম পড়ে না, দীনের পথে চলে না দেখে গত ৩১ মার্চ সে স্বামীকে ছেড়ে দুই বছরের শিশু সন্তান রোজা আক্তারসহ চট্টগ্রাম চলে যায়,” জানান তিনি।

র‌্যাবের ধারণা, নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা দুর্গে দেশের বিভিন্ন এলাকার জেএমবি সদস্যরা এসেছিল। বিশেষ কোনো পরিকল্পনা ঠিক করতে তারা ওই বৈঠকটি করেছে।

“মিতু, মেহেদি ও সুমন মূলত সারা দেশে দাওয়াতি কাজ চালানোর উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে প্রচুর সংখ্যক জিহাদি বই ও প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়েছে,” বেনারকে বলেন র‌্যাব কর্মকর্তা বিল্লাল।

তাদের বিরুদ্ধে নারায়নগঞ্জ বন্দর থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “এর মধ্যে মেহেদী আগেও নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লায় দাওয়াতি কাজ চালিয়েছে।”

বাবাই জানান তাঁর মেয়ে জঙ্গি

গত ২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মো. নুরুল ইসলাম তাঁর মেয়ের জামাই জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

নুরুল ইসলাম জানান, তাঁর মেয়ে জান্নাতুল নাঈম মিতু জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছরের শিশু সন্তানসহ বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন।

তিনি মিতুকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে সক্রিয় হয় র‌্যাব।

মিতু র‌্যাবকে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ‘আল্লাহর সৈনিক’ নামের একটি ফেইস বুক আইডির মাধ্যমে মেহেদি হাসান মাসুদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

মেহেদি তাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত মুসলিমদের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জসিম উদ্দিন রাহমানির উগ্রবাদী বক্তব্য সংবলিত বিভিন্ন ভিডিও সরবরাহ করে। ধীরে ধীরে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হলে তাকে জেএমবির সদস্য হওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে নামাজে অনভ্যস্ত দাঁড়ি না রাখা স্বামীকে পরিত্যাগ করার ফতোয়া পায় মিতু।

এর আগেই সে কাছের বন্ধু-বান্ধবদের জিহাদের দাওয়াত দেওয়া শুরু করে। নিজস্ব দুটি ফেইস বুক আইডি ‘এসো ইসলামের পথে’ এবং ‘আলোর পথ ইসলাম’ থেকেও বিভিন্ন উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করতে থাকে।

প্রচারণায় বিভ্রান্ত তারুণ্য

নারী উন্নয়ন কর্মী এবং শিক্ষাবিদ রোকেয়া কবির বেনারকে বলেন, “আমাদের দেশের নারীরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হওয়ার কারণেই তাদের জঙ্গিবাদের মতো উগ্র মতবাদে আকৃষ্ট করা সহজ।”

“এ ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে সরকারের আরও সতর্ক হওয়া উচিত,” মন্তব্য করে এই নারী মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীরাই ধর্মীয় মৌলবাদকে উসকে দিচ্ছে।”

রাজধানীর গুলশান থেকে ৫ এপ্রিল নব্য জেএমবি’র নারী শাখা ‘ব্যাট উইমেন’ প্রধান হোমায়রা ওরফে নাবিলাকে আটক করে পুলিশ। আগের দিন আফরোজ ওরফে নিনা (২৪) নামের এক সদস্যকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার ধূবনী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের মত হচ্ছে, “সুস্থ ধারার মুক্তবুদ্ধিচর্চার ঘাটতি থাকায় উগ্র মৌলবাদীরা তরুণ-তরুণীদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ঘটনায় এর প্রমাণ মেলে। ফেনীর সদর থানার লালপোল এলাকা থেকে ৭ এপ্রিল মো. রাশেদ উল ইসলাম (২১) নামের এক নব্য জেএমবি সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় অভিযানে ৩ এপ্রিল রিফাত হায়াত (২৫) নামের আরেক সদস্য ধরা পড়ে।

একই দিনে বগুড়া জেলা ডিবি পুলিশের অভিযানে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার হয় মোশাররফ হোসেন (২৫) ও জামিলুর (৩৮) নামের আরও দুই জঙ্গি।

এর আগে গত ২১ মার্চ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার নীলা সিনেমা হলের কাছ থেকে গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগরকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ।

একই সঙ্গে গত বছর রাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আত্মঘাতী বোমা হামলার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত জঙ্গি আকরাম হোসেন নিলয়কেও গ্রেপ্তার করা হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।