জেএমবির শীর্ষ নেতা ইজাজ বিহারে গ্রেপ্তার
2019.08.26
কলকাতা
জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা মহম্মদ ইজাজ ওরফে ইজাজ আহমেদকে (৩০) সোমবার গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। বিহারের গয়ার বুনিয়াদপুরের পাঠানটোলি গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসটিএফের যুগ্ম কমিশনার শুভঙ্কর সিনহা সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত কওসর ওরফে বোমা মিজান ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) হাতে ধরা পড়ার পর জেএমবির ‘আমির’ (প্রধান) হিসেবে কাজ করছিল ইজাজ।”
“সংগঠনে সদস্য সংগ্রহ করার কাজেও সে যুক্ত ছিল,” যোগ করে এই কর্মকর্তা জানান, ইজাজের কাছ থেকে একটি স্যাটেলাইটে ফোন, বেশ কিছু জেহাদি নথি, ল্যাপটপ ও কয়েকটি সার্কিট বোর্ড উদ্ধার করে এসটিএফ। তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
ভারতে গত কয়েক মাসে ধরা পড়েছে মোট ১০ জঙ্গি। এনআইএ গত ১৩ আগস্ট মধ্যপ্রদেশ থেকে জহিরুল শেখ নামে জেএমবির এক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে ২৬ জুন হাবিবুর রহমান শেখ নামে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত এক জঙ্গিকে বাঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার করে তারা।
একইদিন এসটিএফের হাতে কলকাতায় গ্রেপ্তার হয় চার জেএমবি সদস্য। এর আগে ২৮ জানুয়ারি দুজন এবং ২ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি একজন করে জঙ্গি গ্রেপ্তার করে সংস্থাটি।
কে এই ইজাজ?
পুলিশ জানায়, ইজাজের বাসস্থান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের পাড়ুইয়ের অবিনাশপুর গ্রামে। সে পেশায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
বীরভূমে জেএমবির ‘মডিউল’ তৈরির সময়েই সে জেএমবি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তবে একের পর এক জেএমবি নেতা ধরা পড়ার পর সে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে ছিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত কওসর ও সালাউদ্দিনের মতো জেএমবির শীর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
কওসর ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট বেঙ্গালুরুতে এনআইএর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে, আর সালাউদ্দিন এখনো পলাতক।
তদন্তকারীদের দাবি, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের যে বেআইনি মাদ্রাসাগুলোতে জেএমবি নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করে সদস্য নিয়োগ করছে, তার মূল দায়িত্বে ছিল ইজাজ।
ভারতে নিষিদ্ধ জেএমবি
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও ইতিমধ্যেই জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে চালু ‘আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন’ আইনে জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ, জামাত-উল-মুজাহিদীন ভারত, জামাত-উল-মুজাহিদীন হিন্দুস্তানসহ সব শাখা সংগঠনকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আনা হয়।
গত ২৪ মে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, জেএমবি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত। তারা ভারতে সন্ত্রাসের জন্য যুবকদের সংগ্রহ ও উদ্বুদ্ধ করে নাশকতা করতে চায়।
জেহাদের মাধ্যমে শরিয়তি শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে জন্ম নেওয়া জেএমবির সাথে খাগড়াগড় ও বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে যোগ প্রমাণিত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে।
যে শঙ্কা বিশ্লেষকদের
সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নির্মল দাস বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে এবং ভারতে জেএমবি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযানে বেশ কিছু জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ায় এরা এখন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নতুন নতুন ‘মডিউল’ তৈরি করে কাজ করছে।”
“ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, এরা শুধু পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম বা ত্রিপুরাই নয়, আরও অনেক শহর ও রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে,” বলেন তিনি।
১৯ অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফজলে আহমেদ বলেন, “বিচার চলাকালীন ১৯ জন অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করার আবেদন জানান। গত ২২ আগস্ট সেই আবেদনের শুনানিতে ১৯ জন অভিযুক্তই বিচারকের কাছে অপরাধ স্বীকার করে নেন।”
“গুলশান আরা বিবি, আলিমা বিবি সহ ১৯ জনই কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে দোষ স্বীকারের কথা জানিযেছেন,” যোগ করেন তিনি।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবরে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি দোতলা বাড়ির উপরতলায় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু হয়, আহত হন একজন। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হয় দুই নারী।
এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েই ভারতে জেএমবির কার্যকলাপ ও সংগঠন তৈরির কথা জানতে পারে এনআইএ।
তারা আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলেছে, জেএমবি ভারতে বসে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ করা, সদস্য সংগ্রহ এবং অস্ত্র ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে যুক্ত।
কলকাতায় এনআইএর আদালতে গত ছয় মাস ধরে এই বিস্ফোরণ মামলার বিচার চলছে। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।