হলি আর্টিজান মামলার রায়ের আগে জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রম জোরদার
2019.11.25
ঢাকা
হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জঙ্গিদের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। জোরদার করা হয়েছে জঙ্গি বিরোধী তৎপরতা ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক। আগামী ২৭ নভেম্বর আলোচিত এই মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে।
এ রায়কে সামনে রেখে গত তিন দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন অভিযানে কমপক্ষে ১৯ জঙ্গি আটক করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
চট্টগ্রাম পুলিশের মুখপাত্র শাহ আব্দুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, সাম্প্রতিক জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসাবে শনিবার চট্টগ্রাম থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ১৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিট।
একইদিন পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ঢাকার বারিধারা থেকে হলি আর্টিজান হামলা পরিচালনাকারী নব্য জামাআতুল মুজাহিদীনের (নব্য জেএমবি) এক সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বেনারকে জানান সংস্থার মুখপাত্র মো. মাহিদুজ্জামান।
রোববার রাতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে পুরনো জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পুরোনো জেএমবির অস্থায়ী আমির আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আব্দুল হাদী, হাবিবুর রহমান ওরফে চান মিয়া ও মো. রাজীবুর রহমান ওরফে রাজীব ওরফে সোহাগ।
তাঁদের কাছ থেকে ডিটোনেটর, চাকুসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয় বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বেনারকে বলেন, “জঙ্গিদের একটি কৌশল আছে, তারা যখনই কোনো বিপদের বা চাপের মধ্যে পড়ে তখন তারা প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয়।”
তিনি বলেন, “হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ের আগে জঙ্গিরা সহিংস ঘটনা ঘটাতে পারে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সে ব্যাপারে তৎপর আছে বলে মনে হয়। সে কারণে আমাদের পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক জঙ্গি ধরা পড়ছে।”
“জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। গত তিন দিনে প্রায় ২০ জনের মতো জঙ্গি ধরা পড়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, তাদের এই অবস্থায় বড় ধরনের কোনো হামলা পরিচালনা করার ক্ষমতা নেই। তবে, তারা যে কিছুই করতে পারবে না এই ভেবে চুপচাপ থাকলে চলবে না,” যোগ করেন আব্দুর রশীদ।
সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
আগামী বুধবার হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়কে ঘিরে কোনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, “গুলশানের ভাটারা এলাকা থেকে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা পুরোনো জেএমবি। আর যারা হলি আর্টিজান হামলায় অংশ নিয়েছিল এবং পরিকল্পনায় ছিল তারা সবাই নব্য জেএমবির। তবে গ্রেপ্তার আবু রায়হানের সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ ছিল।”
তিনি বলেন, “হলি আর্টিজান হামলায় নব্য জেএমবির যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল, যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছিল, তাদের পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তাদের নেতা এবং মূল পরিকল্পনাকারী, তাদের বেশ কয়েকজন অর্থাৎ আটজন বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে, কেউ আত্মঘাতী হয়েছে। মামলায় আটজন আসামি রয়েছে।”
মনিরুল ইসলাম বলেন, “এই রায়কে কেন্দ্র করে বা তাদের (আসামিদের) ছাড়িয়ে নিতে কিংবা অন্য কোনো নাশকতা কর্মকাণ্ড যাতে না করতে পারে, সে জন্য আমাদের ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক অব্যাহত রেখেছি।”
পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক একেএম শহিদুল হক বেনারকে বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকলেও তাদের মূল এক জায়গায়।
তিনি বলেন, “দেখা যায় একই সদস্য কখনো জেএমবি, কখনো নব্য জেএমবি, কখনো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। তারা তাদের সুবিধামতো সাংগঠনিক অবস্থান পরিবর্তন করে। আবার তাদের নিজেদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে ইসলামিক স্টেটের নাম ব্যবহার করে।”
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরা ও বেকারিতে হঠাৎ হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে আক্রমণকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
কমান্ডো অভিযানের আগেই আক্রমণকারীদের পরিচয় প্রকাশ করে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট।
তবে সরকার ইসলামিক স্টেটের উপস্থিতি নাকচ করে বলেছে আক্রমণকারীরা দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবি’র সদস্য।
ওই ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। সন্ত্রাস বিরোধী আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
হলি আর্টিজান হামলা মামলায় গ্রেপ্তার আটজন আসামি ২৭ নভেম্বর রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।