হলি আর্টিজান মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু
2018.12.03
ঢাকা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ন’টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের দিক থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসছে—বেতারযন্ত্রে এমন একটা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক রিপন কুমার দাস ও তাঁর সঙ্গীরা। সেখানে গিয়ে শোনেন ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি, গুলি আর গ্রেনেডের শব্দ।
সোমবার রিপনের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে হলি আর্টিজানে হামলার বিচারকাজ শুরু হলো। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মঙ্গলবার আবারও বসবে আদালত।
হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ রিপন কুমার দাসসহ ২১১ জনকে সাক্ষী করেছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৩ জুলাই পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম অভিযোগপত্র জমা দেয়।
গত ২৬ নভেম্বর বিচারক মো. মুজিবুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে ৩ ডিসেম্বর রেখেছিলেন।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগেই সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ছয় আসামি রাশেদুর রহমান ওরফে র্যাশ ওরফে আসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, সোহেল মাহফুজ ওরফে আবদুস সবুর খান ও মিজানুর রহমানকে আদালত ভবনে নিয়ে আসা হয়।
এই মামলার অপর দুই আসামি শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন পলাতক আছেন। নিহত জঙ্গি ও মূল পরিকল্পনাকারী ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাঁদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী রিপন কুমার দাস আদালতকে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত ৮টা ৪৫ থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত হলি আর্টিজানে যা যা ঘটতে দেখেছেন তার বিবরণ দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিনের ভূমিকা, তাঁদের কাছ থেকে আলামত বুঝে নেওয়া, লাশের ময়নাতদন্ত সম্পর্কেও আদালতকে জানান রিপন।
রিপন কুমার দাস আদালতকে জানান, বেতারযন্ত্রে খবর পাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। হলি আর্টিজান বেকারির ভেতরে জঙ্গিরা তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে গুলি ও গ্রেনেড ছুঁড়ছে। এর মধ্যেই গুলিবিনিময় ও গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হন আরও ৩০/৩৫ জন।
পরদিন সকালে জিম্মিদশার অবসান ও আসামিদের গ্রেপ্তারে প্যারা কমান্ডো অভিযান চালায়। ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জন জীবিত উদ্ধার হন, নিহত হন পাঁচ সন্ত্রাসী। সাক্ষ্যের শেষ পর্যায়ে তিনি হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন।
“বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে জঙ্গিরা হামলা চালায়। জনসাধারণের মধ্যে তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল,” আদালতকে বলেন রিপন।
তিনি বলেন, “পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিরা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে এবং পরে ঠান্ডা মাথায় দুই পুলিশ অফিসারসহ ২২ জনকে ছুরিকাঘাত, জবাই ও গুলি করে হত্যা করে।”
সাক্ষ্য শেষে রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ ও রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যানের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। বেলা ২টার দিকে রিপন কুমার দাসের আংশিক জেরা শেষ হয়। এই মামলার অপর ছয় আসামির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ চার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁরাও আজ জেরা করতে পারেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে দুই পক্ষের আইনজীবীই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আংশিক জেরা আজ শেষ হলো। কাল সকালে আবারও রিপন কুমার দাসের জেরা দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হবে।”
এদিকে ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ইচ্ছে করে তাঁর মক্কেলদের ফাঁসাতে মামলায় নাম ঢোকানো হয়েছে।
“দেখুন, রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষীকে হাজির করেছেন তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন এজাহার দেখে,” ফারুক আহমেদ বলেন।
আদালতে ভিড়
বহুল আলোচিত এই মামলাটির বিচার কার্যক্রমের দিকে নজর আছে অনেকেরই। গতকাল আইনজীবী, পুলিশ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক ছিলেন। এজলাসে পুলিশের সঙ্গে ছিলেন দুই বিদেশি নাগরিক। তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।
হলি আর্টিজানে হামলা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ূন কবিরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিস্তারিত বলতে চাননি।
“ওরা এসেছেন আগ্রহ থেকে। মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন,” বেনারকে বলেন হুমায়ূন কবির।
গতকাল আদালতে হাজির ছিলেন রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশের বাবা আবদুস সালাম। তিনি বেনারকে বলেন, “আমি নওগাঁ থাকি, ছেলে রাজশাহীতে পড়ালেখা করত। হলি আর্টিজানে হামলার আগে বছর খানেক যোগাযোগ হয়নি। থানায় জিডিও করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু নেয়নি।”