জঙ্গিবাদবিরোধী চলচ্চিত্র পরিচালক হত্যার পরিকল্পনা, দুইজন গ্রেপ্তার

প্রাপ্তি রহমান
2018.12.11
ঢাকা
181211_Ansar_Al_Islam_story_620.jpg নায়িকা শানারৈ দেবী শানুর সাথে পরিচালক খিজির হায়াত খান।
[নিউজরুম ফটো]

চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা খিজির হায়াত খানকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের একটি দল। মাস দুয়েক আগে হত্যা মিশন সফল করতে নিষিদ্ধঘোষিত আনসার আল ইসলামের এই দুই সদস্য দেশে ফেরেন বলে জানা গেছে।

সোমবার রাতে বনানী থেকে গ্রেপ্তার ওই দুই তরুণ হলেন এমদাদ হোসেন ও আবু বকর। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বেনারনিউজকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

“খিজির হায়াত খান দেশের একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার। সম্প্রতি তিনি মিস্টার বাংলাদেশ নামে জঙ্গিবাদবিরোধী একটি সিনেমা বানিয়েছেন। আনসার আল ইসলামের যে দুজন তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা খিজিরকে হত্যা করতে চেয়েছিল,” মহিবুল ইসলাম খান বলেন।

খিজির হায়াত খানের জঙ্গিবাদবিরোধী চলচ্চিত্র মিস্টার বাংলাদেশ গত ১৬ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এর একদিন আগে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত ইশরাত আখন্দ তাঁর বন্ধু ছিলেন। দায়বদ্ধতা থেকে তিনি ছবিটি বানিয়েছেন।

দুই মাসের অনুসন্ধানে আসামিরা শনাক্ত

কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা বলছেন, খিজির হায়াত খান জঙ্গি হামলার শিকার হতে পারেন এমন একটি তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে ছিল। পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিষয়টির তদন্ত শুরু করে।

প্রায় দুই মাসের চেষ্টায় দলটিকে শনাক্ত করা হয়। তবে এখনো এ দলের কয়েকজন সদস্যকে পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার দুই যুবকের বাড়িই ফরিদপুর। তারা গত দুই মাসে খিজির হায়াত খানের কুমিল্লার বাড়িতে গেছেন ও ঢাকার বনানীতে তাঁর অফিসের চারপাশ রেকি করেন।

কথা হচ্ছিল খিজির হায়াত খানের সঙ্গে।

“পুলিশই প্রথম আমাকে বিষয়টি জানায়। সতর্কভাবে চলাফেরা করতে বলে। এর মধ্যেই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কয়েক দিন আগে আমাকে ইনবক্সে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়,” খিজির হায়াত খান বেনারনিউজকে বলেন।

“আমার ছবিতে কীভাবে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তরুণের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে সে সম্পর্কিত বার্তা ছিল। ইনবক্সে আমাকে বলা হয়েছে, আমি ইসলামের শত্রু। আমাকে জবাই করা হবে।”

খিজির আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত তরুণেরা কুমিল্লায় তাঁর বাসায় যায়। এ সব তথ্যই তিনি সময় মতো পুলিশকে জানিয়ে রাখছিলেন।

কিলিং মিশনে প্রবাসী ও দেশিরা

পুলিশ বলছে, এই মিশনে এমদাদ ও আবু বকর ছাড়াও আরো কয়েকজন আছেন। তাঁরা সিক্রেট চ্যাট গ্রুপে কথা বলতেন এবং এই গ্রুপের আলোচনাতেই হত্যার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

সংগঠনে এমদাদ আবু সালমান ও হুযায়ফা নামেও পরিচিত। আবু বকরের সাংগঠনিক নাম ফাহিম আবদুল্লাহ।

এই দলের অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ আশা করছে জিজ্ঞাসাবাদে দলের অন্যান্যদের সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে।

বিকেলে দুজনকে আদালতে উপস্থাপন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক কামরুজ্জামান আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চান। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড আবেদনে কামরুজ্জামান বলেন, আসামিরা আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। তারা রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার এবং মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা খিজির হায়াত খানকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

আবারও সক্রিয় আনসার আল ইসলাম

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (পরবর্তীতে আনসার আল ইসলাম)। সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত মেজর জিয়াউল হক দলটির প্রধান সমন্বয়ক ও পুরস্কার ঘোষিত আসামি। ধারাবাহিকভাবে ব্লগার ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে। আল কায়েদা ভিত্তিক এই জঙ্গি সংগঠনটিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিত তরুণদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে পুলিশের হাতে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, আনসার আল ইসলামসহ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা খালি চোখে দেখা না গেলেও, তারা গোপনে তাদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।