সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

পুলক ঘটক
2018.08.09
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
180809_Hasinur_622.jpeg গুম ও অপহরণ বন্ধের দাবিতে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির মানববন্ধন কর্মসূচি। ৫ মে ২০১৪।
বেনারনিউজ

হাসিনুর রহমান নামে বরখাস্তকৃত একজন সেনা কর্মকর্তাকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। তিনি র‍্যাব ৫ ও র‍্যাব-৭ এর পরিচালক ছিলেন। তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা আক্তার।

তিনি বেনারকে বলেন, “বুধবার রাত ১০টার দিকে পল্লবীতে মিরপুর ডিওএইচএস এ বাসার সামনে থেকে হাসিনুরকে ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের লোকজন তুলে নিয়ে যায়।”

তবে পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কেউই তাঁকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। ডিবির (পশ্চিম) উপকমিশনার মোখলেসুর রহমান বেনারকে বলেন, “আমরা এই নামে কাউকে আটক করিনি। তাঁকে অপহরণ বা গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।”

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে এ রকম অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাঁর ব্যক্তিগত পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।”

অনেক আগে থেকে হাসিনুরের বিরুদ্ধে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে। সেনাবাহিনীতে চাকরির সময় তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। তিন বছর জেল খেটে ২০১৩ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।

হাসিনুর রহমান।
হাসিনুর রহমান।
নিউজরুম ফটো
হাসিনুর এক সময় বিজিবিতে কর্মরত ছিলেন। ২০০৫ সালের র‍্যাব-৫ এর অধিনায়ক হিসেবে রাজশাহী এবং ২০০৬ সালে র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক হিসেবে চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। পরের বছর ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর আর্মি ট্রেইনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডে নিযুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর চাকরি হারান তিনি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামীমা আক্তার বলেন, “সন্ধ্যায় হাসিনুর কাছাকাছি এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় দুটি গাড়ি তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে। তিনি বাসার সামনে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সন্দেহ হওয়ায় তিনি ওই গাড়ি এবং এবং লোকজনের ছবি তোলার জন্য কেয়ারটেকার মোক্তারকে নির্দেশ দেন।”

মোক্তার ছবি তুলতে গেলে ওই ব্যক্তিরা নিজেদের ডিবি পুলিশের পরিচয় দেয়। তারা জোর করে মোক্তার ও আমার স্বামীকে গাড়িতে তুলে নেয়।

শামীমা জানান, “কিছু দূর যাওয়ার পর মোক্তারকে মারধর করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। পরে রাতে সে বাসায় ফিরে এসেছে। হাসিনুরের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রাতেই অভিযোগ দিতে পল্লবী থানায় চলে যাই। পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছিল। অনেক সময় অপেক্ষার পর রাত আড়াইটার দিকে একটি সাধারণ ডায়েরি নিয়েছে।”

তিনি বলেন, “ঘটনার পর পরই আমি সেখানে গিয়ে দেখি ওর (হাসিনুর) ব্যবহৃত পিস্তলটি রাস্তায় পড়ে আছে। পুলিশ পিস্তলটি উদ্ধার করে। আমি সেটা আমার অনুকূলে রাখতে চাইলেও বলা হয় লাইসেন্স দেখাতে। বাসা থেকে লাইসেন্সের কাগজপত্র দেখানো হলেও তা আমাদের কাছে দেওয়া হয়নি।”

হাসিনুরের পিস্তলটি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নবায়ন করা আছে বলেও জানান তাঁর স্ত্রী।

শামীমা আক্তার জানান, হাসিনুরকে তুলে নেওয়ার পর পুরো পরিবার উদ্বিগ্ন। হাসিনুর কোথায় আছেন, কেমন আছেন এটাই এখন জানতে চান এবং তাঁকে ফেরত চান।

হাসিনুর বীর প্রতীকসহ তিনবার সরকারি পুরস্কার পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, হাসিনুর এমন কোনো অন্যায় করেননি। তাঁর ক্ষেত্রে আইনানুগ পন্থায় সবকিছু হওয়ার দাবি জানান।

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা

পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, “হাসিনুর রহমান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ কারণে দণ্ডিত হয়েছিলেন এবং সেনাবাহিনীর চাকরি হারান।”

২০০৯ সালের অক্টোবরে হিজবুত তাহরির নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র শিক্ষক ও হিজবুত তাহরিরে উপদেষ্টা গোলাম মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হন। তাঁর জবানবন্দি থেকেই হাসিনুর রহমানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়।

হাসিনুর রহমান তখন র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক ছিলেন। র‍্যাবের হাতে হিজবুত তাহরিরের বেশ কয়েকজন সদস্য আটক হওয়ার পর র‍্যাবও হাসিনুর রহমানের সঙ্গে হিজবুত তাহরিরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়।

২০১০ সালে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে হাসিনুর লে. কর্নেল হিসেবে চাকরি করার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সামরিক আদালতের বিচারে তাঁর পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সেনা কর্তৃপক্ষ পরে তাঁর দুই বছর সাজা কমায়। ২০১৩ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “হাসিনুর এর স্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন যে তাঁকে ডিবি পুলিশ তুলে গেছে। এটা যদি সত্য না হয়, তাহলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব তাঁর সন্ধান করা। এভাবে মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাবে এটা কাম্য নয়।”

নূর খান বলেন, তিনি যদি জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার ও বিচার করা উচিত। যে কোনো গ্রেপ্তার কিংবা সাজা আইনি প্রক্রিয়াতেই হওয়া উচিত।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।