সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
2016.11.09
Dhaka
বিদেশে অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান, তাঁর স্ত্রী নাসরিন খান ও ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ আইনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এ মামলাটি অধিকতর তদন্তের অনুমতি দেয় আদালত। এর ফলে প্রায় দেড় দশক আগে ১৬ মিলিয়ন হংকং ডলার পাচারের পুরানো এই মামলা পুনরুজ্জীবিত হলো।
পাশাপাশি তাঁদের হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাব জব্দের পূর্বের আদেশ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার এ-সংক্রান্ত আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান। আর আসামিপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
এ বিষয়ে খুরশীদ আলম খান বেনারকে বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। ফলে দুদক এ মামলার অধিকতর তদন্ত করতে পারবে।”
তিনি জানান, “আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করলে আসামিদের জামিন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।”
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান এবং তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলাটি দায়ের করে দুদক। মামলায় ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ মিলিয়ন হংকং ডলার পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
এর প্রায় দুই বছরে পরে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে আদালতে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় কোন মুদ্রা পাচার হয়নি বলে জানায় দুদক। ওই প্রতিবেদন গ্রহণপূর্বক চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওই তিনজনকে অব্যাহতি দেয় বিচারিক আদালত।
এদিকে ২০০৮ সাল থেকে প্রশাসনিক আদেশে হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাবটি জব্দ রাখে সেখানকার পুলিশ। এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা না থাকলে ওই অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশকে চিঠিতে জানায় সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
এরপর দুদকের পক্ষ থেকে আগের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি জানিয়ে বিচারিক আদালতের কাছে মামলাটি পুনঃতদন্তের অনুমতি চাওয়া হয়।
এ বছরের ২ জুন এ–সংক্রান্ত দুটি আবেদনই খারিজ করে দেয় ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। পরে সে আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন করে দুদক। এরপর গত ৫ জুন হংকংয়ে আসামিদের অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
ওই দিন এক রুলে বিচারিক আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না এবং মামলাটি কেন পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়।
বুধবার ওই রুলেরই নিষ্পত্তি করে আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এদিকে মানি লন্ডারিংসহ যেকোনো ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দিলেও কেউ যাতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হয় সে বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ বেনারকে বলেন, “দুর্নীতির সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নেই। প্রচলিত আইনেই দুর্নীতিবাজদের বিচার হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় যাতে এমন মামলার মাধ্যমে কারও চরিত্র হনন না করা হয়।”
এদিকে সম্প্রতি সরকারের পৌনে পাঁচ শো কোটি টাকা পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল কোম্পানি নিয়েও মোরশেদ খান বিপাকে রয়েছেন। বকেয়া টাকা পরিশোধের শর্তে আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি আবারও চালু হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম এই মোবাইল অপারেটর কোম্পানিটি। এতে মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেডের প্রায় ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।