চাঞ্চল্যকর জুবায়ের হত্যা: পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল

জেসমিন পাপড়ি
2018.01.24
ঢাকা
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবন। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বহুল আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর বুধবার এই রায় দেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

তবে এ হত্যাকাণ্ডকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিণতি ও দীর্ঘদিন বিচারহীনতার ফল বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া পাঁচজন হলেন- একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মোহাম্মদ রইছ ও জাহিদ হাসান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাহবুব আকরাম এবং দর্শন বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রাজু।

এদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। সে আবেদন খারিজ করে আগের সাজা বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বাকি চারজন পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

যাবজ্জীবন বহাল থাকা দুজন হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজমুস সাকিব তপু ও দর্শন বিভাগের ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ। আর খালাস পেয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র অভিনন্দন কুণ্ড অভি ও শফিউল আলম সেতু, দর্শন বিভাগের কামরুজ্জামান সোহাগ এবং ইতিহাস বিভাগের মাজহারুল ইসলাম।

জুবায়ের হত্যা মামলার আসামিদের সবাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ছিলেন।

এ রায়কে দৃষ্টান্তমূলক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম। তিনি বেনারকে বলেন, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীনদের দাপট কতটা সেটা জুবায়ের হত্যা দিয়ে প্রমাণ হয়। তবে এই বিচারের রায় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বেনারকে বলেন, “তদন্তে এসেছে জুবায়েরকে টার্গেট করেই মেরে ফেলা হয়। আর এ ধরনের নৃশংস একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে সেটা হতো অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। আমি এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করছি।”

তিনি বলেন, “কাউকে হত্যা করলে হত্যাকারীকেও ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে- এ রায়ের মাধ্যমে এই ম্যাসেজটা যাবে।”

রায়ের সময় সরকার পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরোয়ার কাজল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস এবং আসামিপক্ষে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, রানা কাউসার, আবু হাসনাত মো. মফিজুর রহমান টুটু ও ফাহিমা রাব্বি রিতা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আসামিদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান অ্যাডভোকেট রানা কাউসার।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতরভাবে আহত হন ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র জুবায়ের। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নিবন্ধক হামিদুর রহমান।

ওই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়কার উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগে বাধ্য হন।

২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জুবায়ের হত্যার দায়ে ১৩ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। সে সময় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।

বিচারহীনতার ফল

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত জানায়, জুবায়ের হত্যাকাণ্ড পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিণতি। অতীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা হত্যাকাণ্ড বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলেও পর্যবেক্ষণে বলা হয়।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, “পেশি শক্তির জোরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের সহিংসতা, নৃশংসতা, অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যা কারও কাম্য হতে পারে না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।