সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিরোধী দল বিএনপি

জেসমিন পাপড়ি
2016.11.04
ঢাকা থেকে
161104-bd-political-620.jpg সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এর আগে বক্তৃতা করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জানুয়ারি ২০, ২০১৪।
স্টার মেইল।

কয়েক দিন আগেই রাজধানীতে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে দু’দিনব্যাপী সম্মেলন করেছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অথচ এর মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েও পাচ্ছে না দেশের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিষয়টি রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতা তৈরি করেছে।

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুলিশ সমাবেশের অনুমতি না দিলেও বিষয়টিকে সরকারের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের সফল কাউন্সিলের পর নিজেদের থিতিয়ে পড়া দলকে চাঙা করতে বড় ধরনের সমাবেশ আয়োজন করতে চায় বিরোধী দলটি। এ জন্য ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে প্রথমে ৭ ও পরে ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে ডিএমপির কাছে অনুমতি চায় বিএনপি।

তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, “একাধিক রাজনৈতিক দল একই স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। এমন অবস্থায় ৭ ও ৮ নভেম্বর কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।”

তবে বিএনপি ছাড়া আর কোন কোন দল সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বেনারের প্রশ্নের জবাব দেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকল্প স্থান হিসেবে বিএনপি আগামী ৮ নভেম্বর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুনরায় আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি। তবে সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করছে দলটি।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেনারকে বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েও আমরা পাইনি। তাই আগামী ৮ নভেম্বর নয়াপল্টনে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছি। লিখিত অনুমতি না পেলেও এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী।”

এক অনুষ্ঠানে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, “একাধিক রাজনৈতিক দলের আবেদনের অজুহাতে আপনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিলেন না। তাহলে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দিন। সেখানেই আমরা সমাবেশ করব।”

রাজনৈতিক ‘কারণ’ দেখছে বিএনপি

সমাবেশের অনুমতি না দেওয়াকে রাজনৈতিক কারণ হিসেবেই দেখছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের কথামত পুলিশ বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না বলে দাবি করেছে দলটি।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “ভয় পেয়েই আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, খালেদা জিয়া মাঠে নামলে, লাখ লাখ জনতা তাঁর পিছু মাঠে নামবে। এই গণতন্ত্রকামী জনগণকে ভীষণ ভয় পায় তারা। সে জন্যই বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।”

একই অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ বলেন, “তাদের (ক্ষমতাসীনদের) কথা শুনে পুলিশ কর্মকর্তারা বিএনপির সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকারকে হত্যা করছেন।”

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনৈতিক  ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। ওই বছরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর নানা রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যে সেনানিবাসে বন্দী দশা থেকে ৭ নভেম্বর তখনকার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়া মুক্ত হন। পরে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা নেন এবং আরও পরে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল বিএনপি।

এরপর থেকে বিএনপি ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসলেও আওয়ামী লীগ দিনটি পালন করে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস হিসেবে।

দায় অস্বীকার আওয়ামী লীগের

সমাবেশ করতে না দেওয়ার জন্য বিএনপি আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও, দায় অস্বীকার করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বেনারকে বলেন, “সমাবেশ করার অধিকার সব দলেরই রয়েছে। তবে ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের। সেটা নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা কখন, কীভাবে, কাকে অনুমতি দেবে; সেটা সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ার। এ বিষয়ে আমাদের (আওয়ামী লীগের) কোনো বক্তব্য নেই।”

কয়েক দিন আগে বিএনপির ৭ নভেম্বরের সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যায় হানিফ বলেন, “বিএনপির সমাবেশ নয়, আমি বলেছিলাম ৭ নভেম্বর, সিপাহি বিপ্লব নামে কোনো সমাবেশ জনগণ দেখতে চায় না। কারণ, সেদিন কোনো সিপাহি বিপ্লব হয়নি, গণহত্যা হয়েছিল। সেদিন কিছু সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।