খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন
2018.01.26
ঢাকা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সরকারের পক্ষ থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
এ রায় ঘিরে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “এ রায়কে ঘিরে কেউ বিশৃঙ্খলা বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
শুক্রবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তবে "ধমক দিয়ে কোনো লাভ হবে না। খালেদা জিয়ার ওপর কোনো অন্যায় অবিচার হলে জনগণ তার জবাব দেবে,” বেনারকে বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।
প্রায় ১০ বছর আগে দায়ের করা ওই মামলায় রায় ঘোষণা হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার পঞ্চম জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এটাই প্রথম দেশে সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা বিচারের রায় হতে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া এই মামলায় দণ্ডিত হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য বলে ঘোষিত হবেন।
এই মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও আসামি।
নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে রায়
এদিকে এ রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক জোরদার হচ্ছে। বিএনপির দাবি এ রায় আগে থেকেই প্রস্তুত করা। পাল্টা যুক্তি দিয়ে সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে, রায় কী হবে সেটা বিএনপি আগে থেকে কীভাবে জানল?
এ বিষয়ে গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় পূর্বনির্ধারিত। সরকার আগে থেকেই এই রায় লিখে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, বিচারে তারই প্রতিফলন হবে।”
তাঁর এ কথার জবাবে একইদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “রায়ে আদালত খালেদা জিয়াকে সাজা দেবে, এ রকম নিশ্চয়তাই মির্জা ফখরুলকে কে দিলো?”
এ রায়কে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। তাঁরা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকটসহ নানামুখী অস্থিরতার মধ্যে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হলে তা দেশের জন্য শুভকর কিছু হবে না।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আল-মাসুদ হাসানুজ্জামান বেনারকে বলেন, “রায়ের ফলাফল পরবর্তী নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে এটুকু বলা যায়।”
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় কী হবে সেটা বলে দেবে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যাবে। রায় যদি বিএনপির পক্ষে যায় তাহলে এক ধরনের, আর বিপক্ষে গেলে অন্য ধরনের কর্মকাণ্ড আসবে।”
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অভিযোগ, দলটিকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বেনারকে বলেন, “সরকার চাইছে যেকোনো মূল্যে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার।”
“তবে কোনো অশুভ নীল নকশা করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন করতে চাইলে বিএনপি সে নির্বাচনে যাবেই না। নির্বাচন হতেও দেওয়া হবে না,” বলেন তিনি।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই দল ঘোষণার কাজ শুরু করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। দলকে প্রস্তুত করতে শনিবার থেকেই দলটির ১৫টি সাংগঠনিক টিম দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্র।
আর ৩০ জানুয়ারি সিলেট দিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী সফর শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটের হজরত শাহজালাল (রাঃ) মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন তিনি। এর আগেও রাজনৈতিক দলের নেতাদের এ মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বেনারকে বলেন, “আমরা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এ জন্য একটি নির্বাচন শেষ না হতেই পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়।”
তিনি বলেন, “এই ধারাবাহিকতায় আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন আমাদের সার্বক্ষণিক কর্মকাণ্ড চলছে। যে সফরগুলো শুরু হতে যাচ্ছে সেগুলোও এ নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরেই।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ শে জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মোট মামলা
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সর্বমোট ১১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি খালেদা জিয়া এবং ৭৬টি মামলা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালেদা জিয়ার দুটি ও তারেক রহমানের তিনটি মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায় রয়েছে; ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা তার একটি।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টসহ দুর্নীতির অভিযোগে রয়েছে পাঁচটি মামলা। সেগুলোর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি ২০১০ সালে দায়ের হয়। আর বাকিগুলো করা হয়েছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে।
দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়া বাকি মামলাগুলো দায়ের করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহ, হরতাল অবরোধের সময় বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধেও সাতটি মামলা ছিল। এগুলোর একটির রায়ে তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তবে কোকো মারা যাবার পর সেসব মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।