খালেদার জন্য ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ
2018.03.20
ঢাকা
দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জন্য ব্রিটিশ এক আইনজীবীকে আইনি পরামর্শক হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
ওই আইনজীবীর নাম লর্ড কারলাইল বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করার পরদিন দলীয় প্রধানের আইনজীবীদের আইনি পরামর্শক হিসেবে ব্যারিস্টার লর্ড কারলাইলকে নিয়োগের ঘোষণা দিলো বিএনপি।
এই বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের কোনো আপত্তি নেই বলে বেনারকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়াকে বিএনপির একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “আইনি পরামর্শ দিতে গিয়ে লর্ড কারলাইল বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর ধারণা পাবেন।”
“উনি যখন জানবেন খালেদা জিয়া কেন জামিন পাচ্ছেন না, তখন তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে,” বলেন তিনি।
ড. আতাউর মনে করেন, “বিএনপি এখন মূলত ডেসপারেট। যেভাবেই হোক না কেন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের চেষ্টা করছে তারা। কারণ, দলটির ধারণা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসবে।”
৩৬ মামলায় সহযোগিতা দেবেন কারলাইল
এদিকে মির্জা ফখরুল জানান, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বিএনপির সমর্থকেরা ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কারলাইল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা ৩৬টি মামলায় দেশের আইনজীবীদের সহযোগিতা ও আইনি পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে তিনি বাংলাদেশে আসবেন।
দীর্ঘদিন আইন পেশা ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কারলাইল হাউস অফ লর্ডসেরও সদস্য বলে জানান ফখরুল।
বিদেশি আইনজীবি নিয়োগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মহাসচিব ফখরুল বলেন, “তিনি আমাদের আইনজীবীদের সহযোগিতা করবেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিষয়টি তুলে ধরবেন। ক্রিমিনাল মামলার ওপরে তাঁর অনেক বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
“লর্ড কারলাইল খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দিত বলে জানিয়েছেন। তিনি খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের বিষয়ে অবগত আছেন,” বলে তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তাঁকে বেআইনিভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে জামিন রহিত করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, দেশে আইনের শাসন নাই। ন্যায়বিচার একেবারেই অনুপস্থিত।”
অনুমতি প্রয়োজন
তবে লর্ড কারলাইলকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোর্টে ‘অ্যাপিয়ার’ করতে বার কাউন্সিলের অনুমতির প্রয়োজন হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে আইনি পরামর্শ দিতে বার কাউন্সিলের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না বলেও জানান তিনি।
“তারা (বিএনপি) যদি তাঁর কাছে আইনি পরামর্শ নিতে চায়, নেবে। আমাদের কোনো আপত্তি থাকার কথা না,” বলেন আইনমন্ত্রী।
এর আগে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত-বিএনপি নেতাদের বিচারের সময় বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের ঘোষণা দেয় অভিযুক্ত নেতাদের পরিবার। কিন্তু সরকার বিদেশি আইনজীবীদের সেই অনুমতি দেয়নি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের জন্য কুয়েত থেকে প্রেরিত আড়াই লাখ ডলার তছরুপের জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। এরপর থেকে তিনি জেলে আছেন।
গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট তাঁকে চার মাসের জামিন দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন পৃথকভাবে তাঁর জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায়। আপিল বিভাগ সোমবার খালেদা জিয়ার জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে রায় দেয়। আগামী ৮ মে তারিখে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি
এদিকে আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচিও দিচ্ছে বিএনপি।
সোমবার খালেদার জামিন স্থগিত হওয়ার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি আগামী ২৯ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আশা করব সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, যাতে আমরা সমাবেশ করতে পারি।”
তবে এখনো বিএনপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার আবেদন হাতে পাননি বলে বেনারকে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র।
সোমবারের দলীয় ঘোষণা অনুযায়ী, বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনসমুহ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পুলিশি বাধায় নেতা কর্মীরা খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারেনি বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
মুন্সিগঞ্জে বিএনপি নেতা কর্মীরা শহরে একত্রিত হয়ে মিছিলের চেষ্টা করে তবে পুলিশি বাধায় তারা শহর প্রদক্ষিণ করতে পারেনি বলে বেনারকে জানিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাই।