পর্নো সাইট বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু, প্রথম ধাপে বন্ধ ৫৬০টি
2016.12.28
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পর্নো ওয়েবসাইটগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। প্রথম ধাপেই এ ধরনের ৫৬০টি পর্ণ সাইট বন্ধ করার কথা জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
“দেশের যুব সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান বিটিআরসি’র সচিব সরওয়ার আলম। নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতেও এ সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে সাইটগুলোকে শতভাগ বন্ধ করা যাবে না বলে মনে করেন ইন্টারনেট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটর গ্রুপের (বিডিনগ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির।
বেনারকে সুমন বলেন, “বিটিআরসি ৫৬০টি সাইটের যে তালিকা দিয়েছে, সেগুলির মধ্যে হয়ত প্রায় দুইশ সাইট বন্ধ হবে। বাকিগুলো হবে না। তবে বলা যায়, এর মাধ্যমে এসব সাইটের ওপর একটা নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হবে।”
বিটিআরসির তথ্য মতে, দেশে হাজার হাজার পর্নোসাইট ব্যবহার হয়। এগুলো একসঙ্গে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই ধাপে ধাপে এসব সাইট বন্ধ করা হবে।
গত ২৮ নভেম্বর আপত্তিকর অনলাইন বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করে টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এ কমিটিতে রয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি, মুঠোফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের প্রতিনিধি, আইএসপি, আইআইজি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।
এ কমিটির দায়িত্ব ছিল ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি ও আপত্তিকর কনটেন্টের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা। একইসঙ্গে বাংলাদেশে সেগুলোর প্রদর্শন বন্ধ করা।
“ওই কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী, তাদের বাছাই করা সবচেয়ে ক্ষতিকর সাড়ে ৫৬০টি পর্নো সাইট বন্ধ করা হয়েছে,” জানান সরোয়ার আলম।
তিনি বলেন, “ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও মোবাইল অপারেটর, বিডব্লিউ অপারেটর, এনটিটিএনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে গত সোমবার বন্ধ করার জন্য ৫৬০টি সাইটের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বুধবার থেকে সেই নির্দেশনা কার্যকর করা শুরু হয়েছে।”
তবে ঠিক কোন কোন পর্নো সাইট বাংলাদেশ থেকে দেখা বন্ধ হয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাননি বিটিআরসি সচিব।
সামাজিক অবক্ষয় রোধ
পর্নোসাইটগুলোর মাধ্যমে দেশের তরুণ সমাজ অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এগুলোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এ বিষয়ে সচিব সরোয়ার আলম বলেন, “হাজার হাজার নয়, বলতে গেলে লক্ষাধিক পর্নো সাইট রয়েছে। সাইটগুলোর কারণে দেশে ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন অপরাধ বাড়ছে।”
তিনি বলেন, “এসব কাজে লিপ্ত ছেলে-মেয়েরা মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পড়ালেখায় পিছিয়ে যায়। ফলে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়। এমন অবস্থায় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা করা জরুরি। নইলে কেউ কেউ ভাববে এ ধরনের অপরাধ করা যায়।”
একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রায় ২০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ খরচ হচ্ছে পর্নো সাইটগুলোতে। তার মানে টেলিফোন, ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো শত কোটি টাকার লাভবান হচ্ছে এই সাইটগুলোর মাধ্যমে।
তবে সবগুলো বন্ধ করা যাবে না- এটা স্বীকার করেই সরোয়ার আলম বলেন, “যেগুলো খুবই নিকৃষ্ট এবং নতুন প্রজন্মের নৈতিক স্খলন ঘটাবে বলে আমরা মনে করছি, সেগুলো বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।”
বাংলাদেশের পর্নো সাইটগুলোর নিয়মিত ব্যহারকারী কত সে বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ঢাকার স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ শতাংশ নিয়মিতভাবে পর্নোগ্রাফি দেখছে বলে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপ বলছে। এটা ভীতিকর সংখ্যা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্নো সাইট বন্ধের বিষয়টি পছন্দ না করলেও বিতর্কিত এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না অনেকে। তবে প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন যুব সমাজের অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বাবু আহমেদ বেনারকে বলেন, “নৈতিক অবক্ষয় ঘুষ-খুন-নেশা অনেক কিছু থেকেই হয়। তাই পর্নো সাইট বন্ধের পাশাপাশি প্রতিটি অফিসে ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, প্রতিটা খুনের বিচার, প্রতিটা মাদক ব্যবসায়ী এবং আসক্তদের বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত।”
তাঁর মতে, “পর্নো সাইট বন্ধ করে করে কখনোই ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য দরকার সঠিক শিক্ষা, প্রতিটা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও সঠিক সামাজিক ব্যবস্থা।”
বাবু মনে করেন, ছোটবেলা থেকেই যৌনশিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে যৌনতা নিয়ে তরুণদের নিষিদ্ধ কৌতুহলটা কমে যায়।
পর্নো সাইটগুলোর পেছনে হাজার-লক্ষ-কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে নারীরা শুধু পণ্যই হচ্ছে। এই যুক্তি থেকে পর্নো সাইটগুলো বন্ধ করা হোক। ধর্ষণের প্রতিকার হিসেবে এই সাইট বন্ধ আপাতদৃষ্টিতে কোনো কাজে আসবে না। কারণ, প্রক্সি সার্ভার দিয়ে এসব সাইট দেখা যায়।”
এসব প্রক্সি সার্ভারের কারণেই যেকোনো সাইট বন্ধ রাখা পুরোপুরি সম্ভব নয় জানিয়ে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বেনারকে বলেন, “এসব বন্ধ বা মানুষকে দূরে রাখার জন্য সচেতনতা অনেক বেশি জরুরি।”
পর্নোগ্রাফি সাইটের সংখ্যা বিষয়ে তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে এত পরিমাণ পর্নোগ্রাফি সাইট আছে এবং অনেক দেশে এই কন্টেন্টের চাহিদা অনেক বেশি। তাই এর সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল।”