অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলায় জেএমবির ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
2016.11.09
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যা মামলায় জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আট সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত। এদের মধ্যে তিনজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, চারজন জেলে আর হত্যার পর থেকেই একজন পলাতক রয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে মামলার ধার্য দিনে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জাহিদুল ইসলাম অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে বহুল আলোচিত এই মামলার বিচার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
গত ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার অদূরে ইংরেজির অধ্যাপক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যার বিচার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
“আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ১৯ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন,” বেনারকে জানান রাজশাহী মহানগর পুলিশের আদালত পরিদর্শক আবুল হাশেম।
নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির আট সদস্যকে অভিযুক্ত করে অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।
অভিযুক্তদের মধ্যে জেএমবির সদস্য খাইরুল ইসলাম বাধন, নজরুল ওরফে বাইক হাসান এবং ওসমান পৃথক ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে।
বাকি পাঁচজনের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শরিফুল ইসলাম পলাতক। অপর চার আসামি মাসকাওয়াত আবদুল্লাহ, রিপন আলী, আব্দুস সাত্তার ও রহমতুল্লাহ কারাগারে রয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও শিবির নেতা হাফিজুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি মাসউদ আখতার বেনারকে বলেন, “সিদ্দিকী স্যার হত্যার পর কয়েকজনকে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ক্রসফায়ার নয়, দেশের প্রচলিত আইনে সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
অধ্যাপক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় নিহত শিক্ষকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ বাদী হয়ে ওই দিনই নগরের বোয়ালিয়া থানায় থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শরিফুল পলাতক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ও নব্য জেএমবি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ (২৫) অধ্যাপক রেজাউল হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক। পুলিশ বলছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাকে আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রেজাউল করিমের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। শরিফুলের বাড়িও একই উপজেলায়। তা ছাড়া শরিফুল যে বিভাগে পড়াশোনা করতেন, অধ্যাপক রেজাউল ছিলেন ওই বিভাগের শিক্ষক।
এদিকে শরিফুলসহ দুই আসামীকে ধরিয়ে দিতে দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)।
শরিফুল জেলার বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে। শরিফুলের সন্ধান চেয়ে গত ৪ জুলাই বাগমারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে তার পরিবার।
সর্বশেষ র্যাবের নিখোঁজ ৬৮ জনের তালিকায় ২০ নম্বরে রয়েছে তার নাম। এ মামলায় তার বাবা ও ভাইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
অন্যজন হচ্ছে; নজরুল ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান (২৬)। তার বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনারহার এলাকার আব্দুল্লাহ মিয়া ওরফে মুন্নার ছেলে। নজরুল পুলিশের সঙ্গে কথিত ক্রসফায়ারে মারা গেছে।
মামলার আরেক আসামি মাসকাওয়াথ হাসান ওরফে সাকিব ওরফে আবদুল্লাহ (২৭) জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল ও নজরুলের সংশ্লিষ্টতার কথা জানায়। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় মাসকাওয়াথ। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া জেএমবির সদস্য মাসকাওয়াথ বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছে।
পরিবারের স্বস্তি
অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী হোসনে আরা। বিচারের ক্ষেত্রে আশার আলোও দেখছেন তিনি।
তবে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল আইনের আওতায় না আসায় হতাশা প্রকাশ করেন হোসনে আরা। তিনি বলেন, ড. রেজাউল করিমের সঙ্গে শরিফুলের সম্পর্কও ভালো ছিল।
“ক্যাম্পাসে অধ্যাপক রেজাউল ছিলেন শরিফুলের ‘স্থানীয় অভিভাবক’। তবে শরিফুল কখনও তাদের বাসায় আসেনি। এই শরিফুল জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পর সংস্কৃতিমনা শিক্ষক রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার পরিকল্পনা মতেই হত্যাকাণ্ড ঘটে, এটা মোটামুটি পরিস্কার,” বেনারকে জানান হোসনে আরা।