প্রত্যাবাসন বিরোধী দুই রোহিঙ্গার জেল
2018.01.24
কক্সবাজার
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ‘গুজব’ ছড়ানোর দায়ে দুই রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বুধবার এক সপ্তাহ করে জেল দিয়েছে কক্সবাজারের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মঙ্গলবার ওই দুইজনসহ তিন রোহিঙ্গাকে আটক করে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বুধবার বেনারকে বলেন, মঙ্গলবার তিন রোহিঙ্গা আব্দুল জব্বার (৩০), আব্দুর রশীদ (২৭) ও আরেক ব্যক্তিকে আটক করে র্যাব। এরপর তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
বুধবার আব্দুল জব্বার ও আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের এক সপ্তাহ করে জেল দেওয়া হয়েছে। অপর ব্যক্তিকে খালাস দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষে ২১ দফা দাবি সম্বলিত যেসব ব্যানার টানানো হয়েছিল, সেগুলো পুলিশ তুলে নিয়েছে।
“রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। তাই তাঁদের আইনানুযায়ী বিক্ষোভ করার অধিকার নেই। আমরা দেখছি কারা এই বিক্ষোভের পেছনে কাজ করছে,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা আবুল খায়ের।
র্যাব-৭ কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বেনারকে বলেন, প্রত্যাবাসন বিরোধী গুজব ছড়ানোর জন্য ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের বলেছিল, এখন মিয়ানমার ফিরে গেলে তাঁদের জেলে পুরে রাখবে ও হত্যা করবে।
গত শুক্রবার রোহিঙ্গাদের একটি অংশ কুতুপালংয়ে ও সর্বশেষ সোমবার নৌকাফিল্ড ক্যাম্পের কাছে স্বল্প সময়ের জন্য বিক্ষোভ করে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিরোধিতা করা হয় ওই বিক্ষোভ থেকে।
তারা বাংলা ও ইংরেজি—উভয় ভাষায় তাঁদের দাবিগুলো লিখে ক্যাম্পের বিভিন্ন অংশে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। পরে পুলিশ সেগুলো তুলে নেয়।
রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ জোহর বেনারকে বলেন, তারা বালুখালী ক্যাম্পের নৌকাফিল্ড অংশে তিনবার বিক্ষোভ করেছেন। সর্বশেষ সোমবার বিক্ষোভ করার কথা জানান তিনি।
নুরুল আমিন নামের এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, তিনিসহ আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক মুরুব্বিদের পরামর্শে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার লিখে বিক্ষোভ করেন। তিনি বলেন, তিনি নিজে তাঁদের দাবিগুলো ইংরেজিতে লিখেছেন।
“আমাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিলে আমরা ফিরে যাব। আমরা আর বিক্ষোভ করতে চাই না,” বলেন আমিন।
আরো দুজন গ্রেপ্তার
র্যাব বুধবার জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ (৫০) হত্যার অভিযোগে নূর মোহাম্মদ (৩০) ও আতাউর রহমান (১৬) নামের দুজন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। নিহত মোহাম্মদ ইউসুফ প্রত্যাবাসনের পক্ষের। আর তাঁকে হত্যাকারী দল মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিরোধী।
মেজর রুহুল আমিন বলেন, নিহত ইউসুফ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে তার দেশ রাখাইনে ফিরে যেতে সম্মত ছিলেন। অন্যান্য রোহিঙ্গারাও যাতে স্বদেশ ফিরে যেতে সম্মত হয় সেজন্য ওই মাঝি কাজ করছিলেন।
তিনি বলেন, কিন্তু হত্যাকারীরা রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি নয়। তারা ইউসুফ মাঝিকে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার কথা বলতে নিষেধ করে। কিন্তু ইউসুফ তাদের কথা মানতে রাজি হননি। এ কারণেরই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করে উখিয়া থানায় সোপার্দ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা ইউসুফ মাঝি খুনের সাথে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আদর্শগত অমিল ও নীতিগত পার্থক্যের কারণেই ইউসুফ মাঝিকে হত্যা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে ইউসুফকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকেরা।
পুলিশ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, তারা তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
গত সোমবার ইউসুপ আলী নামের আরেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার গুলশান পাহাড়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন রোহিঙ্গা মমতাজ (৪৫)।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল বেনারকে বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ইউসুপ আলীকে হত্যা করা হয়েছে। একা পেয়ে তার প্রতিপক্ষের সদস্যরা শরণার্থী শিবিরে তাঁকে হত্যা করেছে।
রেহিঙ্গা নেতারা বলছেন, তারা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
রোহিঙ্গা নেতা আব্দুল জব্বার বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার আমাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছে না; এই অবস্থায় আমাদের যাওয়া ঠিক হবে কি না—সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।”
রোহিঙ্গা শরণার্থী শহীদুল ইসলাম বুধবার বেনারকে বলেন, “আরাকানে শত্রুতার জের ধরে আমাদের ভাইয়েরা এখানে ক্যাম্পে মারামারি করছে। যারা ওখানে দুর্বল ছিল, এখানে তারা ক্ষমতাধর। তাই তারা এখানে এসে প্রতিশোধ নিচ্ছে।”
অতিরিক্ত ১০০ পুলিশ মোতয়েন
শরণার্থী ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে বুধবার আরো ১০০ পুলিশ মোতায়েন করেছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল। উখিয়ার তিনটি স্থানের প্রত্যেকটিতে সমান সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তাদের নেতৃত্ব দেবেন একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এর আগে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে একটি পৃথক পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব করে কক্সবাজার পুলিশ। তারই অংশ হিসেবে এই ১০০ জন বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হলো।