শরণার্থী শিবিরে ভাইসহ রোহিঙ্গা নেতা অপহরণ

বেনারনিউজ স্টাফ
2018.01.29
কক্সবাজার
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে নিজের ঘরের সামনে সন্তান কোলে অপহৃত রোহিঙ্গা নেতা সাইফ উল্লার বোন সেনওয়ারা বেগম। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে নিজের ঘরের সামনে সন্তান কোলে অপহৃত রোহিঙ্গা নেতা সাইফ উল্লার বোন সেনওয়ারা বেগম। ২৯ জানুয়ারি ২০১৮।
বেনারনিউজ

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরসার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে এক রোহিঙ্গা নেতা ও তাঁর ভাইকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় পুলিশ বেনারের কাছে অপহরণের কথা স্বীকার করেছে। তবে ঘটনার সঙ্গে আরসা সদস্যদের জড়িত থাকার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই বলে জানান উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাকসুদুল আলম।

গত রোববার রাত আটটার দিকে কুতুপালং ক্যাম্পের ব্লক ইই থেকে অপহৃত রোহিঙ্গা মাঝি সাইফ উল্লাহ (৫৫) ও তাঁর ত্রিশ বছরের সহোদর শওকত উল্লাহ’র (সুরতুল্লাহ) বোন সেনওয়ারা বেগম (২২) এই অভিযোগ করেন।

তিনি বেনারকে জানান, তাঁর দুই ভাই ‘আলেকিন (আল-ইয়াকিন বা আরসা)’ সমর্থন করত না। তাঁদের কথা শুনত না। তাই তাঁদের অপহরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এর আগে আল ইয়াকিন নামে পরিচিত ছিল।

গত ১৯ জানুয়ারি মোহাম্মদ ইউসুফ মাঝি নিহত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সাইফ উল্লাহ ও তাঁর ভাই অপহৃত হলেন।

শরণার্থী শিবিরে অবস্থান ভেদে ১৫০ থেকে ১৬০টি ঘরের দায়িত্বে থাকেন একজন মাঝি। তাঁরা ত্রাণের কার্ডসহ বিভিন্ন সামগ্রী গ্রহিতাদের তালিকা প্রস্তত করেন। সাইফ উল্লাহ ১৫২টি ঘরের দায়িত্বে ছিলেন।

আরসার বিরুদ্ধে অভিযোগ

সাইফের স্ত্রী জান্নাত আরা বেনারকে বলেন, রোববার রাত আটটার দিকে শতাধিক লোক ব্লক ইই–তে তাঁদের ঘরের কাছে উঁকি মারে। সাইফ ওখানে কারা, তা জানতে চান। এসময় আগতরা তাঁকে বাইরে যেতে বলে।

জান্নাত আরা বলেন, সাইফ ও তাঁর ভাই ঘরের বাইরে গেলে তাঁদের মারধর শুরু করে আগতরা। তারা তাঁর স্বামীকে মুখ চেপে ধরে এবং হাত-পা বেঁধে টেনে–হিঁচড়ে বালুখালী ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, “আমি চিৎ​কার করলেও এ ঘটনার সময় কেউ এগিয়ে আসেনি।”

প্রত্যক্ষদর্শী সাইফের বোন সেনওয়ারা বেনারের কাছে বলেন, তিনি অপহরণকারীদের চিনতে পেরেছেন। তিনি আরসার আট সদস্যদের নাম প্রকাশ করেন।

“তারা বার্মাইয়া। তারা আল ইয়াকিন। তারা আমার ভাইদের ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় নিজেদের আল ইয়াকিন বলে পরিচয় দিয়েছে,” বলেন সেনওয়ারা।

তিনি বলেন, “আমরা ওদের বার্মা থেকেই ‍চিনি। আমার ভাইয়েরা ওদের সমর্থন করত না। ওদের পছন্দ করত না।”

ডবল ই ক্যাম্পের আরেক মাঝি মীর আহমেদ (৪৫) বেনারকে বলেন, সাইফ উল্লাহ আরসা বা আল ইয়াকিন সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা করত না।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাকসুদুল আলম বেনারকে বলেন, তিনি নিজে অপহৃত দুই ভাইকে উদ্ধার করতে বালুখালী, মধুরছড়া ও কুতুপালং ক্যাম্পে অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা বোরবার রাতে অপহৃত হয়েছেন বলে তিনি বেনারকে জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এখনো বলতে পারছি না, কে অপহরণ করেছে।”

সেনওয়ারার অভিযোগ সম্পর্কে আহমেদ বলেন, “আমি জানি না আরসা বা আল ইয়াকিন তাদের অপহরণ করেছে কিনা।”

উখিয়ায় কর্মরত একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “শরণার্থী শিবিরে আরসার সদস্যরা সক্রিয়। তারা শরণার্থীদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। যেসব মাঝি তাদের পক্ষে থাকবে না, তাদের লক্ষ্য করে তারা আক্রমণ চালাচ্ছে বা চালাবে।”

শরণার্থীদের একটি বড় অংশ আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে না। তাঁদের অধিকার আদায়ের যোদ্ধা বলে মনে করে।

কুতুপালং ক্যাম্পের ই-ব্লকের জোহার আহমেদ বেনারকে বলেন, আরসা বা আল-ইয়াকিন কোনো জঙ্গি সংগঠন নয়। তারা রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে।

বালুখালী ক্যাম্পের পাঁচ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বেনারকে বলেন, আরসা বা আল-ইয়াকিনের সদস্যরা সন্ত্রাসী নন।

তিনি বলেন, “তাঁরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”

তবে রোহিঙ্গাদের অন্যতম নেতা ড. জাফর আলম বেনারকে বলেন, আরসা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের টার্গেট করে কাজ করছে।

“তাদের বিভ্রান্তিমূলক কথা হচ্ছে, আরসার জন্য লড়াই করো, তুমি মরে গেলে জান্নাতে চলে যাবে,” বলেন জাফর।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।