রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভ
2018.01.30
কক্সবাজার
রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাঁদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবিতে মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের নেওয়া প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গদের বিক্ষোভের দশ দিন পর স্থানীয়রা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করার দাবিতে পাল্টা বিক্ষোভ সমাবেশ করল। এ ধরনের বিক্ষোভ এটিই প্রথম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ গেইটে এই বিক্ষোভ ও মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ইউনিয়ন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “উখিয়ার স্থানীয় মানুষ শঙ্কা ও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরে রোহিঙ্গাদের একাংশের অপতৎপরতায় তারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। তারা নিজেরাই এখন খুনোখুনি করছে। তাদের এখনই ফেরত পাঠাতে হবে।”
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ছুরিকাঘাত ও পিস্তলের গুলিতে চার রোহিঙ্গা নাগরিক নিহত হয়েছে। এসব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সরকারকে সহযোগিতা করে আসছিল।
তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা তাদের সুবিধামতো রোহিঙ্গা নাগরিকদের ব্যবহার করছে। তাদরে লক্ষ্য ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। এসব কর্মকাণ্ড স্থানীয় মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন ও সংগ্রাম কমিটির সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “উখিয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আর আশ্রয় দিতে পারবে না। আমরা রোহিঙ্গাদের খাদ্য, আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা দিয়েছি। তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয়দের ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির সুবিধা সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো স্থানীয়দের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের চাকরি দিচ্ছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, আর্ন্তজাতিক ও বর্হিবিশ্বে কুটনৈতিক তৎপরতায় বাস্তবায়নাধীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফল করতে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি মহল। রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো না হলে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে বলে মত দেন তিনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, “১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক বিবেচনায় আমরা আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু আমাদের অবস্থা এতটা ভালো নয় যে, তাদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেবো।”
তিনি বলেন, তাদের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আগমনের কারণে স্থানীয়রা নানা সমস্যার মুখে পড়ছে।
শিবলী আজাদ নামের আরেক বিক্ষোভকারী বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়ায় কৃষি ধ্বংস হয়ে গেছে। পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। উখিয়াতে শীত মৌসুমে এবার সবজি হয়নি। এখন উখিয়ার মানুষ চড়া দামে চট্টগ্রাম থেকে সবজি কিনে খাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হোক। অতিথিদের মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ও যুগের পর যুগ রাখা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গারা সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে উখিয়ায় প্রবেশ করছে। আমাদের ভয় এবার তারা আর ফিরে যাবে না।”
বিক্ষোভ শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন কমিটির নেতারা।
এদিকে কুতুপালংয়ের (ব্লক ১, ডি) মাঝি শফিউল আলম বলেন, “আমরা রাখাইনে ফিরতে চাই। তবে সেখানকার সরকার যদি আমাদের হক (দাবি) মেনে নেয়। সরকার যদি আমাদের রোহিঙ্গা পরিচয়ে নাগরিকত্ব দেয় ও আমাদের ফেলে আসা সহায় সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয় তবে আমরা ফিরে যাব।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকারুজ্জামান চৌধুরী বেনারকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন সবদিক বিবেচনা করে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার বিবৃতি
এদিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, রোহিঙ্গারা আগমনের পর তাদের মানবিক সহায়তা দিতে বিভিন্ন পদে বাংলাদেশিরা চাকরির আবেদন করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত আগস্ট মাসে রোহিঙ্গাদের আগমনে কক্সবাজারে বাংলাদেশিদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা গত পাঁচ মাসে প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশিকে চাকরি দিয়েছে। আরও শতাধিক বাংলাদেশি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার নিয়োগ করা বাংলাদেশিরা অভিবাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। তাঁরা কক্সবাজারে শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় সম্মুখভাগে কাজ করছে।