রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ আগুন, পুড়ে গেছে কয়েক হাজার ঘর
2021.03.22
কক্সবাজার
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১। ইস্টার্ন সময় বিকেল ০৩:৫০
কক্সবাজারের সবচেয়ে বড়ো শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ের বালুখালীতে সোমবার বিকেলে লাগা ভয়াবহ আগুনে প্রায় সাত হাজার ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দীর্ঘ আট ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
“সোমবার বিকেল ৩টার পর উখিয়া বালুখালী ৮ নম্বর শরণার্থীশিবিরে ঘটা অগ্নিকাণ্ড রাত ১১ টা ১৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে,” সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বেনারকে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. সামছু দ্দৌজা নয়ন।
“এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে যা জেনেছি, সাত হাজারের মতো ঘর পুড়ে গেছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মধ্য দুই হাজার ঘর পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, বাকি পাঁচ হাজার ঘর আংশিকভাবে পুড়েছে।”
শরণার্থী শিবিরে এটি এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ড বলেও জানান তিনি।
তবে ওই আগুনে ১৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন বলে এক টুইট বার্তায় জানান বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রধান রিচার্ড রেগ্যান।
আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত নয় জানিয়ে সামছু দ্দৌজা বেনারকে বলেন, “ঘটনার ভয়াবহতা অনেক বড়, তাই নিশ্চিত করে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলতে আরো অনেকটা সময় লাগবে। কেননা আমরা সবাই মিলে মানুষ বাঁচানোর পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলাম।”
অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি জানিয়ে আরআরআরসি কার্যালয়ের প্রতিনিধি রাশেদুল হাসান বেনারকে বলেন, “বিভিন্ন সূত্র থেকে হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটি এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”
বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ কঠিন ছিল জানিয়ে রাশেদুল হাসান বলেন, “ঘরগুলো খুব ঘিঞ্জি পরিবেশে হওয়ায় আগুন খুব দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। একে একে পাঁচটি ক্যাম্পের অসংখ্য ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।”
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও কাজ করেছে জানিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোশারফ হোসেন বেনারকে বলেন, “ফায়ার সার্ভিস পাশের ব্লকগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়েছে।”
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর প্রায় সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। নতুন ও পুরনো মিলে বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ঘিঞ্জি রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করছেন প্রায় এগারো লাখ রোহিঙ্গা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের ঘটনাসহ শরণার্থী শিবিরে এ বছর মোট পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি পৃথক দুটি অগ্নিকাণ্ডে টেকনাফের উনচিপ্রাং শিবিরে ২১টি ও উখিয়ার লম্বাশিয়া শিবিরে ১২ টি ঘর আগুনে পুড়ে যায়।
এর আগে ১৪ জানুয়ারি টেকনাফের নয়াপাড়ায় এক অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক এবং ৩ জানুয়ারি একই উপজেলার লেদা ক্যাম্পে আগুন লেগে পুড়ে যায় ৬টি ঘর।
বহু রোহিঙ্গা নিখোঁজ
আগুন লাগা পাঁচটি রোহিঙ্গা শিবিরের শিশু ও বৃদ্ধসহ বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা।
কক্সবাজারের বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর হাবিব জানান, “বিকেলে হঠাৎ আগুন দেখতে পাই। বাতাসের গতি বেশি হওয়ায় দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে।”
নিজের অনেক স্বজনের খোঁজ পাচ্ছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাঁরা বেঁচে আছে কিনা জানি না। এটি ক্যাম্পে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।”
ক্যাম্প-৯ এর ব্লক সি-৯ এর সাব মাঝি মো. শুক্কুর বেনারকে বলেন, তাঁর ব্লকে অনেকেই তাঁদের ছেলে-মেয়েদের খুঁজে পাচ্ছে না।
“বসবাসের ঘরটি পুড়ে যাওয়ায় অনেকে এদিক-ওদিক ছুটছে, অনেকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য কুতুপালং ক্যাম্পের দিকে চলে গেছেন,” বলেন শুক্কুর।
উখিয়ার বালুখালীর নয় নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের সি-৯ ব্লকের বাসিন্দা শামসুল আলম বেনারকে বলেন, আগুন লাগার সাথে সাথে রোহিঙ্গারা আতঙ্কে এদিক–ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
“সন্ধ্যার পরও আগুন নেভানো সম্ভব না হওয়ায় অনেক শিশু ও বৃদ্ধ পথ না চেনার কারণে হারিয়ে যায়। আমার এক নাতিও হারিয়ে গেছে,” বলেন শামসুল।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন সরকারি ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সহায়তায় কর্মরত সংস্থাগুলোর জোট আইএসসিজি-এর যোগাযোগ ও গণসংযোগ কর্মকর্তা সাইয়্যেদ মো. তাফহীম বেনারকে বলেন, "এখনই সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির উপর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
ঢাকা থেকে প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমিন পাপড়ি।
আপডেট: আগুনে ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ তথ্য যোগ করা হলো।