উখিয়ায় আবারও আগুন, তিন রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু
2021.04.02
কক্সবাজার
কক্সবাজারের উখিয়ায় ‘রোহিঙ্গা বাজার’ হিসাবে পরিচিত কুতুপালং বাজারে আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন তিন রোহিঙ্গা যুবক। শুক্রবার ভোররাতে শুরু হওয়া তিন ঘণ্টার এই আগুনে আরও অন্তত দশটি দোকান পুড়ে গেছে।
মাত্র দশ দিন আগে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে উখিয়ার বালুখালীতে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়, ঘরছাড়া হন প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। তবে ২২ মার্চের ওই আগুনের মতো শুক্রবারও কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ বেনারকে বলেন, “শুক্রবার ভোরে বখতিয়ার মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা এখন পর্যন্ত উদঘাটন করা যায়নি।”
শুধু এই দুটি অগ্নিকাণ্ডই নয়, গত তিন বছরে উখিয়ায় ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও একটিরও কারণ উদঘাটন হয়নি, এমনকি কে বা কারা অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী তা নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন।
দমকল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের আগুনে একই কাপড়ের দোকানের মালিকসহ দুই কর্মচারী মারা গেছেন। দোকানটির নিহত মালিক ছিলেন ১০ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের রেজাউল হাইয়ের ছেলে ফয়জুল ইসলাম (২২)।
এ ছাড়া ১০ নম্বর শিবিরের আমান উল্লাহর ছেলে মো. আয়াছ (২০) এবং বালুখালী ৯ নম্বর শিবিরের সৈয়দ আলমের ছেলে মো. আনসার উল্লাহ (১৮) আগুনে পুড়ে মারা যান।
নিহত ফয়জুলের ভাই সৈয়দুল মোস্তফা বেনারকে বলেন, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা এখনো বলতে পারছি না।
তিনি জানান, দোকানের ভেতরে এই তিনজনসহ পাঁচজন ছিলেন। আগুন লাগার পর দুইজন বের হয়ে আসতে পারলেও বাকিরা আটকা পড়ে যান।
এর আগে গত ২২ মার্চ বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পাঁচটি শিবিরে নয় হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায়। এ সময় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন নারী পুরুষ ও শিশুসহ অন্তত ১১ জন।
তিন বছরে ৭৩টি অগ্নিকাণ্ড, কারণ অজানা
কক্সবাজারের উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় তিন বছরে শুধু উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনায় অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন বলে বেনারকে জানান ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান সুইছা মারমা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে। এ বছর শুধু উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা শিবিরে নয়টি অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন শিশুসহ ১৪ জন।
“রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। সেখানে ঝুপড়ি ঘর। দুর্গম পাহাড়ে অবস্থানের কারণে সেখানে আগুন লাগলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না,” বেনারকে জানান কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ।
“বেশিরভাগ ক্যাম্পে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা নেই। আবার পানির উৎসের সংকটও বেশি” হওয়ার ফলে আগুন লাগলে শিবিরগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয় বলে জানান তিনি।
বালুখালীর কয়েকটি শিবিরে গত ২২ মার্চ ও শুক্রবার কুতুপালং বাজারসহ বড়ো আগুনের কারণ এখন পর্যন্ত অজানা থাকার কথা উল্লেখ করে আব্দুল্লাহ বেনারকে বলেন, এসব ঘটনার তদন্ত চলছে।
তাঁর মতে, ঘটনাগুলো ছোট ছোট অসতর্কতা, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটসহ নানা কারণে ঘটেছে।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
নতুন ও পুরানো মিলে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরের ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন।