রোহিঙ্গাদের অবস্থা শোচনীয়: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
2018.04.29
ঢাকা
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সফররত প্রতিনিধিদলের প্রধান বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা ‘এখনো শোচনীয়’। রাখাইনে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার অবস্থা নেই।
রোববার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ও উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন শেষে ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলার পর এই মন্তব্য করেন গুস্তাভো অ্যাডোলফো মেজা কুয়াদরা ভেলাসকেজ।
তবে রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো ‘জাদুকরি’ সমাধান নিরাপত্তা পরিষদের কাছে নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনায় মিয়ানমারকে সমর্থনকারী দেশ রাশিয়ার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি দেমিত্রি পলিয়ান্তস্কি।
মিয়ানমারের সমর্থক আরেক দেশ চীনও রাশিয়ার সাথে সুর মিলিয়ে বলেছে, “বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উচিত দ্বি-পাক্ষিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা।”
২৪ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দল আগামীকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ শেষে রোহিঙ্গাদের আদিভূমি রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের জন্য ঢাকা ছাড়বেন। তাঁরা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি’র সাথে মিলিত হবেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে জানতে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী ও দশ অস্থায়ী সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা শনিবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সফরের প্রথম ধাপে কক্সবাজার আসেন।
রোববার সদস্যরা প্রথমে মিয়ানমার সীমান্তে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের দেখতে কোনারপাড়া ক্যাম্প সফর করেন। এরপর তাঁরা উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন ও শরণার্থীদের সাথে কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের অনেকেই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন।
কুতুপালং শিবিরে রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের স্বাগত জানান। তাঁদের হাতে ছিল ইংরেজিতে লেখা বিভিন্ন দাবির প্ল্যাকার্ড: “আমরা বিচার চাই, নো এনভিসি, নট বেঙ্গলি, ইয়েস রোহিঙ্গা।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেক রোহিঙ্গা বিক্ষোভ করার চেষ্টা চালালে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তবে, শেষ পর্যন্ত কোনো বড় মিছিল–সমাবেশ ছাড়াই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন শেষ করেন।
রোহিঙ্গা নেতারা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের হাতে প্রত্যাবাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে রাখাইনে আন্তর্জাতিক বাহিনীর দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি, মূল গ্রাম ও বাড়ি ঘরে ফিরতে দেওয়া এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারসহ ১৩-দফা দাবি হস্তান্তর করেন।
তাঁদের দাবির একটি কপি বেনারের হাতে রয়েছে।
ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ব্লক-ডি এলাকায় রাষ্ট্রদূতেরা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
প্রতিনিধিদলের প্রধান গুস্তাভো অ্যাডোলফো মেজা কুয়াদরা ভেলাসকেজ রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে যাবে।
“যারা ফিরে যাবে তাঁদের অবস্থা এখনো শোচনীয়। সেখানে (রাখাইনে) স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার অবস্থা ও পরিবেশ নেই,” বলেন রাষ্ট্রদূত ভেলাসকেজ।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দেমিত্রি পলিয়ান্তস্কি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা চোখ বুজে নেই। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে কী ঘটছে তা জানতেই তাঁরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে এসেছেন। অন্যথায় তাঁরা এখানে আসতেন না।
“তবে নিরাপত্তা পরিষদের হাতে কোনো জাদুকরি সমাধান নেই। আমরা অবশ্যই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব। আমরা সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান বের করার চেষ্টা করব,” তিনি বলেন।
“আমরা এখনো বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে দ্বি-পাক্ষিকভাবে সমস্যা সমাধানের কথা বলব। আমরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক গঠনমূলক আলোচনা ও সমঝোতা উৎসাহিত করার চেষ্টা করব,” বলেন দেমিত্রি পলিয়ান্তস্কি।
তিনি বলেন, “আমরা দুপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে চাই।”
চীনের রাষ্ট্রদূত হাইতাও উ সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি খুব জটিল বিষয়। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে”।
তিনি বলেন, চীন চায় প্রথমেই সহিংসতা বন্ধ হোক। এরপর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে বের করুক। সবশেষে, চীন চায় সমস্যার মূল কারণ বের করে তা সমাধান করা হোক।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান যে কঠিন আমরা তা বারবার করে বলে আসছি। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বলেছেন, তাঁরা রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে ফোকাস হারাবেন না এবং এই সমস্যাকে প্রাধান্য দেবেন। এই ঘটনা যতটা গুরুত্ব দাবি রাখে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হবে।
শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, বাংলাদেশ সব সময় জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে মনে করা হয়। এই সফরের পর রাশিয়া ও চীন অবস্থান পরিবর্তন করছে কিনা জানতে চাইলে জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ স্থায়ী প্রতিনিধি সের্গেই কোনোনুশেঙ্কো বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখনো একটি বিতর্কিত বিষয় নয়। এ নিয়ে এখনই নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব নেওয়ার সময় হয়নি। এখন শুধু বিবৃতি প্রচারিত হবে।
“তবে এই সফর আমাদের পরবর্তী কাজের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে,” বলেন সের্গেই কোনোনুশেঙ্কো।