রাখাইন থেকে পালিয়ে আসার পথে নৌকা ডুবে ৩৪ রোহিঙ্গার মৃত্যু

আব্দুর রহমান
2024.08.07
কক্সবাজার
রাখাইন থেকে পালিয়ে আসার পথে নৌকা ডুবে ৩৪ রোহিঙ্গার মৃত্যু রাখাইন থেকে পালিয়ে আসার সময় নৌকা ডুবে নিহত রোহিঙ্গাদের মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার টেকনাফে দাফনের আগে জানাজা করছেন স্থানীয় লোকজন। ৭ আগস্ট ২০২৪।
[আব্দুর রহমান/বেনারনিউজ]

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকা ডুবির ঘটনায় দুই দিনে কক্সবাজারে শিশুসহ ৩৪ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।

এ ছাড়া এক নারীসহ দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন স্থানীয় জেলেরা।

বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদীতে ভেসে আসা ২০ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ পাওয়া যায় বলে বেনারকে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গনি।

এর আগের দিন আরও ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৫ টি শিশু রয়েছে।

ওসি বলেন, “যেহেতু বাংলাদেশে বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেহেতু আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে মৃতদেহগুলো দাফনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এ ছাড়া কোনো স্বজন মৃতদেহ নিতে আসলে তা হস্তান্তর করা হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এতে গোলার বিকট শব্দে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে।

রাখাইনে যুদ্ধের মুখে পালাতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকা ডুবির ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পান রোহিঙ্গা নারী তবেদিলা বেগম।

তিনি বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে রাখাইনের ফয়েজি পাড়া ও আলী পাড়ায় বোমা হামলা চলছে। এতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সেখানে সারি সারি মানুষের লাশ পড়ে আছে। তাই আমরা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।”

তিনি বলেন, “নৌকায় আমার দুই মেয়েসহ চার জন সদস্য ছিল। ছোট মেয়ে এবং এক নাতনির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। বাকিদের খোঁজ মেলেনি এখনো।”

নৌকাটিতে ৩১ জন যাত্রী ছিল জানিয়ে তবেদা বলেন, “সবাই গুলির মুখে পড়ে এখানে পালিয়ে আসতে রওনা করেছিলাম। একেবারে কূলে এসে সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। আমাদের মতো অনেক লোক রাখাইন থেকে এপারে পালিয়ে আসছে।”

লাশ দাফন করছে তরুণরা

স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, উদ্ধার করা লাশগুলো স্কুল-মাদ্রাসায় পড়ুয়া তরুণদের সহায়তায় স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে।

দাফন কাজে নিয়োজিত থাকা শাহপরীর দ্বীপের যুবক মোহাম্মদ সালমান বেনারকে বলেন, “নাফ নদীতে ভেসে আসা মৃতদেহগুলো স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় দাফনের কাজ চলছে। আমাদের দল আজ ১১ জনের মরদেহ দাফনের দায়িত্বে রয়েছে। অন্য দলও একইভাবে আল্লাহর খুশির কথা ভেবে এই দায়িত্ব পালন করছে।”

নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে ভাসছে মৃতদেহ

নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে আরো নারী ও শিশুদের মৃতদেহ ভাসছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুর রশিদ মিয়া।

স্থানীয় জেলেদের বরাত দিয়ে তিনি বেনারকে বলেন, “জেলেরা বলছে সাগরে মানুষের আরও মৃতদেহ ভাসছে। মূলত গতকাল রোহিঙ্গা বহনকারী দুটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনায় কূলে একের পর এক লাশ ভেসে আসছে।”

যদিও যুবে যাওয়া অপর নৌকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় জেলে নুর কালাম বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে দালাল চক্র টাকার বিনিময়ে এখান থেকে নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের পারাপার করছে। এতে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এই মুহূর্তে ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানির ঘটনা বাড়তে পারে।”

হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ছয়জন রোহিঙ্গা

মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ ও মর্টারশেল বিস্ফোরণে আহত অবস্থায় আসা এক শিশুসহ ছয়জন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বেনারকে বলেন, “বিজিবির পক্ষ থেকে নিয়ে আসা আহতদের মধ্য এক শিশুর পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।”

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল বৃদ্ধি

চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর নজরদারি বজায় রাখা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার (বিএন) সাব্বির আলম সুজন।

তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নাফ নদী ও সেন্টমার্টিন এলাকায় যে কোনো প্রকার অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে টহল জোরদার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।