রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাবার বরাদ্দ বেড়েছে, নতুন করে অনুপ্রবেশ
2024.08.13
কক্সবাজার ও ঢাকা
বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাবার বরাদ্দ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ ডলার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় গত বছর এই বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে আট ডলার করা হয়েছিল।
ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি করে এ বছর আগস্ট থেকে সেই বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার করা হয়েছে বলে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয় থেকে বেনারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
“আগস্টের শুরু থেকে ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য রেশন জনপ্রতি ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার করেছে। এর আগেও দুই দফা রেশন বৃদ্ধি করা হয়েছিল,” মঙ্গলবার বেনারকে বলেন প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
ডব্লিউএফপি’র কমিউনিকেশন অফিসার তারেক সালাহউদ্দিন এই বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে রোহিঙ্গারা এই বাড়তি বরাদ্দের সুবিধা সবাই পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে রোহিঙ্গা নেতারা বেনারকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে এবং তাঁরা বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে রয়েছেন।
কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, “নিবন্ধিত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোই তাঁদের বরাদ্দ থেকে নতুন করে প্রবেশ করা রোহিঙ্গা আত্মীয়-স্বজনকে খাবার দিচ্ছেন। ফলে তাদের ভাগাভাগি করে খেতে হচ্ছে। এতে অনেক পরিবার বরাদ্দ বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না।”
নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ
কক্সবাজারের পুলিশ, প্রশাসন ও রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের সাথে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার পতনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে নতুন করে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, “মিয়ানমার চলমান যুদ্ধে সেখানে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে, অনেকে আহত হয়েছে এবং ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। কিছু জায়গায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে।”
রোহিঙ্গাদের প্রবেশের বিষয়টি সরকারিভাবে স্বীকার করা হলেও সংখ্যা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
গত এক সপ্তাহে অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি বলেন, তাদের অনেকেই ক্যাম্পে আগে থেকে অবস্থান করা স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।”
“পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকার ও আরকান আর্মি তাদের চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। অনেকে প্রাণে বাঁচতে নাফ নদ ও সাগর পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে,” যোগ করেন জোবায়ের।
তবে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানান বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা বহু অনুপ্রবেশকারীদের নিবৃত করেছি। বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটেছে।”
গত কয়েকদিনে নৌকা ডুবির ঘটনায় নাফ নদী-সাগরে “অন্তত ৩৯ জন” রোহিঙ্গার মৃতদেহ পাওয়া গেছে জানিয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গনি বেনারকে বলেন, “আমরা শুনেছি নতুন করে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা সাধ্যমতো তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করছি।”
রোহিঙ্গারা ‘দুই দিক থেকেই বিপদে’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের চেষ্টা “খুব স্বাভাবিক” বলে মঙ্গলবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, “আরেকটি কারণ হলো রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গেছে। ফলে তারা দুই দিক থেকেই বিপদে আছে।”
তবে এবারের প্রেক্ষাপট ও ২০১৭ সালের প্রেক্ষাপট এক নয় জানিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ২০১৭ সালে “রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। আর এবার তারা অবস্থার শিকার।”
তাঁর মতে, “এই অবস্থা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের উচিত হবে মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সাথে একটি যোগাযোগ রাখা, যাতে তারা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে এবং রোহিঙ্গারা নতুন করে আসতে বাধ্য না হয়।”
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট যে কেবল বাংলাদেশের সংকট নয়, সেটি যে বিরাট আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সঙ্কট সেটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সরকারের আমলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোর মুখ দেখবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক।
তিনি বেনারকে বলেন, “অন্তত এই সরকারের আমলে ক্যাম্পের পরিস্থিতি বদলাবে। আমরা আশা করছি, ক্যাম্পে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার পাশাপাশি অপরাধ কার্যক্রম বন্ধ হবে।”