মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন

আরএফএ স্টাফ
2024.11.27
মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন মিয়ানমারের ৭৯তম সশস্ত্র বাহিনী দিবসে নেপিডোতে জেনারেল মিন অং হ্লাইং। ২৭ মার্চ ২০২৪।
[এপি]

রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দায়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের নেতৃত্ব দানকারী সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) আবেদন করেছেন প্রসিকিউটররা।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে একটি রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন পুলিশ পোস্টে হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছিল।

সেনারা সেসময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উৎখাতে তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। সহিংস সে অভিযানের ফলে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলো রোহিঙ্গা বেসামরিক মানুষের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সে হামলাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরাও সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ‘গণহত্যার অভিপ্রায়ে’ সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল।

rohingya 3.jpg
দলে দলে রোহিঙ্গারা পালংখালির নিকটে মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নাফ নদী পার হচ্ছেন। ১ নভেম্বর ২০১৭। [এপি]

আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান এক বিবৃতিতে বলেছেন “বিস্তৃত, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের পর আমার অফিস এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জেনারেল মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গাদের নির্বাসন ও নিপীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানোর জন্য দায়ী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।”

“আমার অফিস এই অভিযোগ করছে যে ২৫ আগস্ট ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সময়কালে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী তাতমাদো দেশটির পুলিশ, সীমান্তরক্ষী এবং সেইসাথে অ-রোহিঙ্গা বেসামরিকদের সহযোগিতায় এই অপরাধসমূহ করেছিল।"

রেডিও ফ্রি এশিয়া তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।

২০২২ সালে হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত আইসিজে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলায় মিয়ানমারের সমস্ত আপত্তি খারিজ করে দেয়।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার মামলা দায়ের করার এক্তিয়ার নেই দাবি করে মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা চারটি প্রাথমিক আপত্তি দায়ের করেছিল।

আইসিসি আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য ব্যক্তির অপরাধমূলক দায় প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অপরদিকে আইসিজে কাজ করছে অপরাধের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিয়ে।

rohingya 4.jpg
ওপর থেকে নেয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরে মংডুর কাছে একটি পুড়িয়ে দেয়া একটি রোহিঙ্গা গ্রাম। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭। [রয়টার্স]

‘আমাদের জন্য দরজা খুলতে পারে'

বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেছেন, "এটি আমাদের জন্য দারুণ খবর।"

বুধবার বেনারনিউজকে তিনি বলেন, “আমরা চাই সামরিক শাসকের সাথে আরো যারা রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হোক।”

“তাদের বিচার নিশ্চিত করা হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি আমাদের জন্য মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দরজা খুলে দিতে পারে।”

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের দমন অভিযানকে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিদ্রোহীদের আক্রমণের বৈধ প্রতিক্রিয়া হিসেবে সাফাই দিয়েছিলেন।

মিন অং হ্লাইং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চি এবং তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সু চি এবং তাঁর শত শত গণতন্ত্রপন্থী সহকর্মী ও সমর্থক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যসহ দেশের বিশাল অংশে জান্তা বিরোধী বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা আবার সহিংস হামলার শিকার হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।