মানবিক সহায়তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছাড়, বাংলাদেশের দাবি রোহিঙ্গা অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে

মোস্তফা ইউসুফ
2025.01.28
ঢাকা
মানবিক সহায়তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছাড়, বাংলাদেশের দাবি রোহিঙ্গা অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভিড়। ১৮ জানুয়ারি ২০১৮।
[এপি]

আপডেট: ৩০ জানুয়ারি, ইস্টার্ন সময় বিকেল ৫.১৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রের সকল আন্তর্জাতিক সহায়তা কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা জানায়, মার্কিন রোহিঙ্গা সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

এ জন্য সপ্তার শুরুর দিকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে বসবাসকারী দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সহায়তা দেবার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়ক বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শাহ আলম খোকন মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।”

এই বিষয়ে জানতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার দূতাবাসের এক মুখপাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত বিষয়ক নির্বাহী আদেশের “আওতামুক্ত” বিষয়গুলো দেখতে বেনারকে পরামর্শ দেন।

ট্রাম্প বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করে আদেশ জারির পর মঙ্গলবার “জীবনরক্ষাকারী” কর্মসূচিগুলো অব্যাহত থাকবে বলে এক মেমোতে জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

এতে প্রেসিডেন্টের স্থগিতাদেশের আওতামুক্ত হিসেবে “জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তা”র মধ্যে “জীবনরক্ষাকারী ঔষধ, চিকিৎসা, খাদ্য, আশ্রয়, জীবনরক্ষাকারী সহায়তা এবং এসব কর্মসূচি পরিচালনার জন্য জরুরি ও যৌক্তিক সরবরাহ ও প্রশাসনিক ব্যয়,” থাকবে বলে জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার বেনারনিউজকে বলেছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচিতে তহবিল স্থগিত করার বিষয় আমরা অবগত আছি। তবে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তাই আমরা এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।”

বেনারের ই-মেইলের জবাবে সংস্থাটি আরও জানায়, “আমরা অনেকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছি। বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরও কার্যকর ও গঠনমূলকভাবে কাজ এগিয়ে নিতে চাই সামনের দিনগুলোতেও।”

সরকারের মতে, ‘আশ্বাসপেয়েছে বাংলাদেশ

গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের সহায়তার বিষয়টি তাঁর নির্বাহী আদেশ থেকে অব্যাহতি দেয়ায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমানের সাথে সাক্ষাতকালে এ সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।

“বাংলাদেশকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে এ নির্বাহী আদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তা বাধাগ্রস্ত হবে না,” বলেন জাহাঙ্গীর।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন একই দিন স্পষ্ট করেন যে ৯০ দিনের এ স্থগিতাদেশ মূলত আমেরিকার বৈদেশিক সহায়তার একটা সাধারণ পর্যালোচনা। এটা বিশেষ কোনো দেশকে লক্ষ্য করে জারি করা হয়নি।

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দাতা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবার শীর্ষে। দেশটি মোট অনুদানের প্রায় অর্ধেকই দিয়ে থাকে। গত বছর অপেক্ষাকৃত কম অর্থ দিলেও তা ছিল অন্যদের চেয়ে বেশি। দাতাদের মধ্যে আরও আছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।

মার্কিন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের এ সহায়তার পরিমাণ ছিল ২২৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশে কক্সবাজার ও ভাসানচরে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণ-নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগ এড়াতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।