রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম তালিকা হস্তান্তর

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.02.16
ঢাকা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম তালিকা হস্তান্তর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল চিও সোয়ের - কে স্বাগত জানান। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
AP

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সফররত মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল চিও সোয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই তালিকা হস্তান্তর করা হয়

সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের তালিকা হস্তান্তরের বিষয়টি জানান।  বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের  বলেন, “বৈঠকে তাদের কাছে ১ হাজার ৬৭৩টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা দিয়েছি।”

তিনি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা যাচাই বাছাই করে দেখবে যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক কি না। এরপর তারা তাদের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকারকে জানাবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনার জন্য গত বছর অক্টোবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নেপিডোতে চিও সোয়ের সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক করেন।

মন্ত্রী বলেন, “ঐকমত্যের ভিত্তিতে আজ সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে। আমাদের আস্থা আসছে হয়তো তারা তাদের নিয়ে যাবে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে যে ১০-দফা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা নিয়ে আজ সফল আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের সেদেশে মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে তারা আন্তরিক হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা এবং সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা জিরো লাইনে মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান করছে তাদের ব্যাপারে ২০ ফেব্রুয়ারি মিটিং হবে। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে নেওয়া যাবে সেটার ব্যাপারে ওই দিন সিদ্ধান্ত হবে।

মন্ত্রী বলেন, বান্দরবান জেলার তামব্রু এলাকার বিপরীতে জিরোলাইনে মিয়ানমার সীমান্তে যে ৬ হাজার ৫০০ মানুষ অবস্থান করছে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে অনুষ্ঠিতব্য সভায় অংশ নেবেন।

শরণার্থী পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বেনারকে বলেন, বান্দরবানের ডেপুটি কমিশনার মিয়ানমারের প্রস্তাবিত ওই সভায় অংশ নেবেন। তবে সভাটি কোনো ফোরামে অনুষ্ঠিত হবে এ ব্যাপারে তিন কিছু বলতে পারেননি।

জিরো লাইনে আটকেপড়া রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে এবং মাইক ‍দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার জন্য বলছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমন চৌধুরী বেনারকে বলেন, তিনি শুনেছেন মিয়ানমার সরকার নো-মানস ল্যান্ড এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। তারা গত কয়েক দিন ধরে মাইকিং করে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য বলছে।

তিনি বলেন, “এখানকার অবস্থা মোটেও ভালো নয়।”

গত বছর ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নামক জঙ্গি সংগঠনের আক্রমণের জবাবে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানান মন্ত্রী।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দার পর রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে ফিরিয়ে নিতে গত বছর ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করে মিয়ানমার সরকার।

সেই চুক্তির আলোকে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে ৩০-সদস্যের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। ১৬ জানুয়ারি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এর প্রথম সভায় প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপ ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করে।

মন্ত্রী খান বলেন  “এখনো প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন করে রোহিঙ্গা আসছে। আজকের সভায় আমরা বিষয়টি উত্থাপন করেছি। তারা এগুলো স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন এগুলো বন্ধ করার প্রচেষ্টা নেবেন।”

তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছি এই লোকগুলো যদি আবার অনিশ্চয়তার দিকে যায়, আবার যদি তারা ভয়ভীতিতে থাকে, তাদের বসতবাড়ি না থাকে তাহলে তারা আবার চলে আসবে।”

“তখন তারা বলেছে, তারা তিন ধাপে পলিসি নিয়েছে। প্রথমে তারা তাদের (রোহিঙ্গাদের) থাকার ব্যবস্থা করবে; তারপর তাদের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করবে। তৃতীয় পর্যায়ে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করবে,” আসাদুজ্জামান বলেন।

তিনি আরও বলেন, “আমরা কফি আনান কমিশনরে সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা বলেছি। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কফি আনান কমিশনরে সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছেন।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চিহ্নিত ৪৯টি ইয়াবা ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে চিও সোয়ে তাকে আশ্বস্ত করেছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শুক্রবার দুই প্রতিবেশী দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা যখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করছিলেন, সে দিনটাতেও রাখাইন থেকে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ১৩৬ জন কক্সবাজারে এসেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।