আকস্মিকভাবে ভারত সরকার ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করায় ভারত–বাংলাদেশের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত
2016.11.10
Dhaka
মায়ের চিকিৎসা করিয়ে গত মাসেই ভারতের মুম্বাই থেকে দেশে ফিরেছেন মফিদুল আলম খান। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরও তার কাছে রয়ে গেছে প্রায় নয় হাজার রুপি। নোটগুলো সবই আবার ৫০০ ও ১০০০ রুপির।
ভারত সরকার হঠাৎ করে এই নোট দুটি নিষিদ্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। সম্প্রতি ভারতে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই তাঁর। স্থানীয় কোনো মানি চেঞ্জারও এই নোটগুলো আর নিচ্ছে না।
মফিদুলের মতো এমন ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা দেশে কম নয়। প্রতিবছর বাংলাদেশের নাগরিকেরা ভারতে ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে আসা–যাওয়া করেন। তাঁদের অনেকের কাছেই কমবেশি ভারতীয় রুপি থাকে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভারত সরকার ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। জাল মুদ্রা প্রতিরোধ, কালো টাকার দৌরাত্ম বন্ধ করা এবং দুর্নীতি ঠেকাতে এমন উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে সরকার।
ভারত সরকারের ওই ঘোষণার পরই বাংলাদেশের মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ভারতীয় রুপির কেনাবেচা বন্ধ করে দিয়েছে।
বাতিল হওয়ার খবরে গতকাল বুধবার অনেকেই ৫০০ ও ১০০০ রুপির ভারতীয় নোট নিয়ে ব্যাংক, মানি চেঞ্জার হাউস ও খোলাবাজারে ভিড় করেছিলেন। কিন্তু তারা হতাশ হয়ে ফিরেছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বেনারকে বলেন, “পাসপোর্টে রুপি এনডোর্স করা হয় না। সুতরাং যার কাছে এখন যে পরিমাণ রুপি থাকুক, তার কোনো রেকর্ড নেই।”
তিনি বলেন, ভারতে যাওয়ার পথে বিমানবন্দর থেকেও মুদ্রা পরিবর্তন করা যাবে না। বাংলাদেশের ভেতরে এই রুপি পরিবর্তনের আর কোনো সুযোগ নেই।
তবে ব্যক্তির জন্য না হলেও ব্যাংকগুলোর কাছে ৫০০ ও ১০০০ রুপির যে নোট রয়েছে সেগুলো বিনিময় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুভঙ্কর সাহা বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তারা যে উপায়ে বিনিময়ের কথা বলবে সেভাবেই বিনিময় হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বেনারকে বলেন, ভারতে নিয়মিত লোকজন যাওয়া আসা করার কারণে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পরিচিতজনের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার একটা সুযোগ রয়েছে। তারপরও অনেকের ক্ষতি হবে।
“তবে টাকা নিষিদ্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের অনেক হাসপাতাল, হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় এরই মধ্যে নোটগুলো নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই লোকগুলোর ভোগান্তি বেশি হচ্ছে,” জানান জায়েদ বখত।
মানুষের ভোগান্তির জন্য জায়েদ বখত ভারতের ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত আসায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই ঘোষণাটি দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আরও বেশি সাবলীল করার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারের নোট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ করে বাতিল হওয়া নোট ভারতে পাঠানোর পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন। কারণ বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে কোনো ভারতীয় নোট না আসায় সেগুলো ফেরত দেয়া যাবে না। ভারতে পাঠানোর পথ খুঁজে পেলেই ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট কেনা শুরু করবেন তাঁরা।
মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোস্তফা খান বেনারকে বলেন, “ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এখন রুপি বিক্রির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কিন্তু মানি চেঞ্জাররা ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, মানি চেঞ্জাররা কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ি বেশি লাভের আশায় কমমূল্যে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট কিনছে। মানুষ কোন উপায় না পেয়ে সে দামেই বিক্রি করছে।
“অন্যদিকে ১০০ রুপির নোটের দাম বেড়ে গেছে। বাজারে এখন ১০০ রুপির নোটের টান পড়েছে। এক টাকা ৩০ পয়সা থেকে এক টাকা ৪০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে ১০০ রুপির নোট। যা আগে একা টাকা ২০ পয়সা থেকে এক টাকা ২৩ পয়সা দরে বিক্রি হতো,” জানান মোস্তফা খান।
জাল নোট এবং অবৈধ মুদ্রা বিস্তার রোধের কারণ দেখিয়ে গত মঙ্গলবার প্রচলিত ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করে নতুন ৫০০ ও ২০০০ রুপির নোট চালুর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঘোষণা অনুযায়ী পর্যটকেরা ভারতের যেকোনো ব্যাংকে গিয়ে ১১ নভেম্বর তারিখের পর নির্ধারিত ফরম নিয়ে তা পূরণ করে ৫০০ ও ১০০০ রুপি পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। আর ৩০ ডিসেম্বরের পর শুধু রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বাতিল হওয়া নোট নেবে।
কলকাতায় বেড়াতে যাওয়া সাংবাদিক আবুল কাশেম টেলিফোনে বেনারকে জানান, “আমি কলকাতায় এসেই ৩০০ ডলার ভাঙিয়ে রুপি করি। আর সেই রাতেই পাঁচ শ এবং এক হাজার রুপির নোট বন্ধ থাকার ঘোষণা আসে। আমার কাছে এখনো সাত হাজার রুপি থাকলেও আমি নিঃস্ব প্রায়। কারণ, সবগুলো নোটই পাঁচ শ টাকার।”
তিনি বলেন, ব্যাংকে দীর্ঘ লাইন থাকায় এসব নোট জমা দিয়ে পরিবর্তিত রুপি পাননি তিনি।