বিমানবন্দর নিরাপত্তায় ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি
2016.03.21
অবশেষে বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কাজের দায়িত্ব পেল যুক্তরাজ্যের বেসরকারি কোম্পানি রেড লাইন অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি লিমিটেড। সোমবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদর দপ্তরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
আলোচিত এই চুক্তি অনুযায়ী, আগামী দুই বছর শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি।
গত কয়েক মাস ধরে শাহজালালে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল ওই দেশটি। শেষমেশ গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। আর সোমবার যুক্তরাজ্যেরই পরামর্শ অনুযায়ী সরকার বিমানবন্দরটির নিরাপত্তার দায়িত্ব দিল রেড লাইনকে।
তবে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর নিজে দেশের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে ‘পরামর্শ’ দেওয়ায় কিছুটা সমালোচনাও রয়েছে যুক্তরাজ্যকে নিয়ে।
জানা যায়, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে দুটি কোম্পানির নাম প্রস্তাব করা হয়। তাদের মধ্য থেকে রোববার রেডলাইনকে চূড়ান্ত করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সোমবার চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে শেষ হয় এর বাকি আনুষ্ঠানিকতাটুকু। বেবিচকের পক্ষে সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নুরুল ইসলাম এবং রেডলাইনের পক্ষে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)পল ম্যাসন চুক্তিপত্রে সই করেন। এসময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং বেবিচক চেয়ারম্যান এম সানাউল হক উপস্থিত ছিলেন।
“মঙ্গলবার থেকেই রেডলাইন তাদের কাজ শুরু করবে,” বেনারকে জানান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বেশ কয়েক মাস ধরে দীর্ঘ আলাপ, আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে এই চুক্তি সই হয়েছে।”
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূলত তিন ধরনের কাজ করবে রেডলাইন। প্রতিষ্ঠানটি মূলত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি তদারকি, বিদ্যমান জনবল পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং একই সঙ্গে সরকারকে পরামর্শও দেবে।
“শুরুতে ২৯ জনের জনবল নিয়ে কাজ শুরু করবে রেড লাইন। এদের মধ্যে ১৪জন মাসখানেক পর চলে যাবে। বাকিরা বিমান বন্দরের বিদ্যমান জনবলের সঙ্গে কাজ করবে। আর এসব সেবার জন্য দুই বছরে রেডলাইনকে দেওয়া হবে ৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা,” জানান বিমানমন্ত্রী।
রেডলাইনের কাজের মধ্য দিয়ে সরকার আশা করছে যুক্তরাজ্য শিগগিরই ঢাকার সঙ্গে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।
বেনারের সঙ্গে আলাপকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ফ্রান্স ও আফগানিস্তানে সুনামের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার কাজ করে আসছে রেডলাইন।
তবে উদ্বিগ্ন যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর দেননি মন্ত্রী।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালিসন ব্লেকও। এ বিষয়ে কোন ধরনের কথা বার্তা এড়াতে গণমাধ্যম থেকেও দূরে থাকছেন নতুন দায়িত্ব নেওয়া এই রাষ্ট্রদূত।
‘উন্নত হবে নিরাপত্তা পরিবেশ’
এদিকে দেশের বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, বিমান বন্দর যেকোনো দেশের জন্য স্পর্শকাতর জায়গা। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও কঠোরতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান বেনারকে বলেন, “বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তার অনেকাংশেই সত্যি। আমাদের বিমানবন্দরের কর্মীরা স্ক্রিনিং করেন আড্ডা দিতে দিতে, পান খেতে খেতে। কেউবা আবার সিগারেট থেকে খেতে বাইরে চলে যান। পর্দায় কী দেখাচ্ছে তাও মনোযোগ দিয়ে দেখেন না। যা সত্যিই আশাহত হওয়ার মত বিষয়।”
তিনি বলেন, “এসব সমস্যা চিহ্নিত করে বাংলাদেশেরই তা সমাধানে উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। তা আমরা করতে পারিনি। উদ্বিগ্ন কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা বিমানবন্দর পরিদর্শন করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন। তবুও সতর্ক হয়নি বাংলাদেশ। তারই পরিণতি হিসেবে আজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে হয়েছে।”
“আশা করি ব্রিটিশ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত হবে। আর অচিরেই কেটে যাবে বিদেশি বন্ধুদের উদ্বেগ,” মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন।