রোহিঙ্গাদের ঈদ: শিশুদের আনন্দ, বড়দের বিষাদ
2018.08.22
কক্সবাজার
গত বছর যাদেরকে নিয়ে রোহিঙ্গারা কোরবানি ঈদ করেছিলেন, এবার তাঁরা অনেকেই শুধু স্মৃতি। তাই অনেক রোহিঙ্গাই শরণার্থী জীবনের প্রথম কোরবানি ঈদ কাটিয়েছেন বিষাদের মাঝে।
“গত কোরবানির দিনেই আমার দুই ছেলে ও দুই নাতিকে আমার সামনে গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনারা,” বেনারকে জানান টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম।
মংডুর সাপবাজার থেকে বাংলাদেশে আসার আগে চোখের সামনে একমাত্র ছেলে আর দুই নাতিকে খুন হতে দেখেছেন ৭০ বছর বয়সী আমির আলী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি উল্টো জিজ্ঞেস করেন, “আমার কোনো পরিবার নেই। আমি কার সঙ্গে ঈদ করব?”
গত কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরসা রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলা চালায়। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু করে। এর ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
শরণার্থী জীবনে “টাকা-পয়সা নাই, চলাফেরার সুযোগ নাই,” মন্তব্য করে মংডু থেকে আসা আবুল কালাম (৪৪) বলেন, “আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারিনি। কারণ সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য আমাদের কোনও আনন্দ নেই।”
তবে ঈদের দিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবির ঘুরে দেখা যায় শিশুরা সকাল থেকেই সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে।
রোহিঙ্গা শিশু খায়রুল (১২) ও রুহুল (১০) বেনারকে জানায়, তারা আজ সারাদিন ঘুরে বেড়াবে। আইসক্রিম আর চকলেট খাবে।
শিশুদের জন্য কুতুপালংয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় নাগরদোলা, চড়কিসহ মিনি মেলা বসেছে। এর আয়োজক হাসেম (৩৫) জানান, এই মেলা কমপক্ষে তিন দিন থাকবে।
কোরবানি উপলক্ষে সরকারি উদ্যোগে শিবিরগুলোতে কয়েক হাজার গরু জবাই হলেও টার্গেটের তুলনায় তা কম ছিল বলে জানান উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান। তবে আরো গরু আসার কথা রয়েছে বলে “আমরা নিরাশ হচ্ছি না” মন্তব্য করে তিনি বলেন, মাংসের সাথে চাল, ডাল, তেল- মশলাও বিতরণ করা হবে।
বুধবার সকালে রোহিঙ্গা শিবিরে কমপক্ষে নয়শ মসজিদে ঈদের নামাজ হয়েছে বলে বেনারকে জানান কুতুপালং এক নম্বর ক্যাম্পের একটি মসজিদের ইমাম মৌলভি কাইয়ুম।
টেকনাফ থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আবদুর রহমান।