প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরলেন শিক্ষকেরা

জেসমিন পাপড়ি
2018.01.05
ঢাকা
এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ছয় দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন চালিয়ে আসা শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ছয় দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন চালিয়ে আসা শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ০৫ জানুয়ারি ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে অনশন ভঙ্গ না করা শিক্ষক–কর্মচারীরা অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া আশ্বাসে বাড়ি ফিরলেন। আমরণ অনশনের ষষ্ঠ দিনের মাথায় শুক্রবার বিকেলে তাঁরা অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসান জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনস্থলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা জানান। এ সময় তাঁরা আনন্দ–উল্লাস করে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা শনিবার থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরার ঘোষণা দেন।

তবে মাদ্রাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন পাওয়া সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ওই সব মাদ্রাসার শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি শুক্রবার পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল ফটকের আরেক পাশে চলছে এই কর্মসূচি। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২৭ হাজার ৮১০ টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় ৯৪২ কোটি টাকা।

এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নন-এমপিওভুক্ত প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করা হলে মাসে আরও প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।

২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন মহলের দাবি সত্ত্বেও সরকার এই খাতে অর্থ বরাদ্দ করেনি। সাত বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বন্ধ দরজা খুলছে।

যেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ (মূল বেতন ও কিছু ভাতা) দেওয়া হয়, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত বলা হয়। আর যেগুলো এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। এগুলোকে নন-এমপিও বলা হয়।

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে টানা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। গত রোববার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন তাঁরা।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত মঙ্গলবার অনশন স্থলে গিয়ে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ করেছিলেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন, অনশন অব্যাহত রাখেন।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী বেনারকে বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী এর আগে একাধিকবার আশ্বাস দিলেও দাবি পূরণ হয়নি। এ জন্য তাঁরা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কিংবা তাঁর কোনো দায়িত্বশীল প্রতিনিধি এসে এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিলেই কেবল অনশন ভাঙবেন।”

গোলাম মাহমুদুন্নবী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তাঁরা আশ্বস্ত হয়েছেন। তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শিক্ষকেরা অনশন ভেঙেছেন। শিক্ষকরা যার যার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

গোলাম মাহমুদুন্নবীকে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান সাজ্জাদুল হাসান। অন্যরাও অনশন ভেঙে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর একান্ত সচিব ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া অনশনস্থলে যান।

গতকাল সন্ধ্যায় প্রচণ্ড শীতে আরও কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত ১২৫ জন অসুস্থ হন বলে। পুলিশ অসুস্থদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।

প্রবীণ শিক্ষক নেতা মাজহারুল হান্নান বেনারকে জানান, “প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেওয়ায় হয়তো এসব শিক্ষকের ভাগ্য খুলতে পারে। তবে এমপিওভুক্ত হতে হবে যোগ্যতার মাপকাঠিতে। দলীয় পরিচয়ে বা অন্য কোনো বিকল্প উপায়ে যেন এমপিওভুক্ত না হয়—সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”

তাঁর মতে, রাজনৈতিক কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া বন্ধ না হলে এ ধরনের সংকট কিছুদিন পরপর চলতেই থাকবে। এ জন্য ম্যাপিং করে প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।