চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী

পরিতোষ পাল
2018.01.26
কলকাতা
রবীন্দ্র সদনে শায়িত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্র সদনে শায়িত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৬ জানুয়ারি ২০১৮।
বেনার নিউজ

ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী মারা গেছেন। শুক্রবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন ৮৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী।

তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর একমাত্র কন্যা সোমা বেনারকে বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ সকালে তিনি মারা গেছেন।”
সুপ্রিয়া দেবীর (চৌধুরি) চলে যাওয়ায় বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়ের অবসান হয়েছে বলে মনে করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
“বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের অন্যতম একজন স্থপতি ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী,” তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে এই কথা বলেন এক সময়ের অন্যতম জুটি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

শুক্রবার সন্ধ্যাতেই রাষ্ট্রীয় মর্যদায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়। এর আগে রবীন্দ্র সদনে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেতা, অভিনেত্রীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
নায়িকা হিসেবে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছিলেন যাঁর সঙ্গে, সেই অভিনেতা সৌমিত্র বেনারকে বলেন, “সত্তর বছরের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ল। বিধ্বস্ত লাগছে।”
পরিচালক তরুণ মজুমদার বলেছেন, “সুপ্রিয়ার চলে যাওয়ার শোকটা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না।”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিয়া দেবীর বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের বলেন, “সুপ্রিয়া দেবীর মতো কিংবদন্তীকে আমরা হারালাম। শেষ হলো উত্তম-যুগেরও।”

সুপ্রিয়া দেবী (১৯৩৫-২০১৮)। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭।
সুপ্রিয়া দেবী (১৯৩৫-২০১৮)। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭।
বেনার নিউজ]
কিংবদন্তীতে পরিণত

অসামান্য গড়ন, উন্নত গ্রীবা এবং অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে সুপ্রিয়া দেবী পঞ্চাশ ও ষাট দশকে প্রবল আলোড়ন তৈরি করেছিলেন।

“বসু পরিবার’ ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে অভিনয় দিয়ে শুরু করে একসময় উত্তম-সুচিত্রা জুটির পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রে দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিল উত্তম-সুপ্রিয়া জুটি। উত্তম কুমারের পাশাপাশি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন সুপ্রিয়া।
১৯৫৯ সালে উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সোনার হরিণ’ ছবি সুপ্রিয়া দেবীকে প্রবল জনপ্রিয় করে তুলেছিল। চৌরঙ্গী, সূর্যশিখা, উত্তরায়ণ, লালপাথর, শুন বরনারী থেকে বনপলাশীর পদাবলির মতো বহু ছবিতে অধ্যাবসায় ও অভিনয়ের নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই নায়িকা।

তবে ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ও ‘কোমল গান্ধার’ এ উদ্বাস্তু জীবনকে ফুটিয়ে তুলে সুপ্রিয়া দেবী কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন।
“এই দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সুপ্রিয়া দেবীর আসন বাঙালি চলচ্চিত্র-প্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে”, বেনারকে বলেন সুপ্রিয়া অনুরাগী শর্মিষ্টা দত্ত।
চলচ্চিত্র আলোচক অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বেনারকে বলেন, “পোশাকে-আশাকে, সংলাপে ও সামাজিক সমস্যার রূপায়ণে সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রায় কী করে নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনযাপন চিত্রিত করতে হয় সুপ্রিয়া তা সফলভাবে দেখাতে পেরেছিলেন।”

নব্বইয়ের দশকে সুপ্রিয়া দেবী বাংলা টিভিতে মেগা ধারাবাহিক ‘জননী’তে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন৷ হয়ে উঠেছিরেন বাঙালির ‘জননী’।
চলচ্চিত্রে জুটি তৈরি করার পাশাপাশি পরবর্তীতে তিনি সংসার পেতেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে।
উত্তম কুমারের মৃত্যুতে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন সুপ্রিয়া দেবী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।