সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি
2017.06.19
ঢাকা
বাংলাদেশের সমতলের আদিবাসীদের জন্য কোনো মন্ত্রণালয় না থাকায় এই খাতে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ রাখা হয় না। এর প্রেক্ষিতে অতি দরিদ্র এই সকল জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নের জন্য পৃথক একটি মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়েছে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর আলোচনা সভায় এ দাবি তোলা হয়। সাংসদ, বিশিষ্ট নাগরিক ও আদিবাসী নেতাদের নিয়ে এই ককাস গঠিত।
“সমতলের আদিবাসীদের জন্য কোনো মন্ত্রণালয় না থাকায় তাদের নামে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তাই আমাদের দাবি সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে তাদের নাম উল্লেখ করে জাতীয় বাজেটে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হোক,” বেনারকে বলেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সমন্বয়ক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল।
প্রসঙ্গত আগামী অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সমতলের ২০ লাখ আদিবাসীদের নামে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীনে সমতলের আদিবাসী এবং দলিত-হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ ৩০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও সেই টাকা খরচের ব্যাপারে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কোনো ভূমিকা নেই।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়ে দ্রং বলেন, “সমতলের ২০ লক্ষাধিক আদিবাসী মানুষের জন্য এবার ৩০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অর্থ বাস্তবায়নে সমতলের আদিবাসীদের কোনো অংশগ্রহণ, ক্ষমতা নেই।”
তিনি বলেন, আবার এই ৩০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ সমতলের আদিবাসীদের জন্যই ব্যয় হবে সেই নিশ্চয়তাও নেই।
“২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আদিবাসীদের জন্য কোনো অনুচ্ছেদ নেই। আমরা আশা করি, অর্থমন্ত্রী দেশের সমতলের আদিবাসীদের নামে পৃথক অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবেন,” বলেন দ্রং।
এ প্রসঙ্গে মেসবাহ কামাল বলেন, “আগামী অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ‘স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স’ শিরোনামে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ‘স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স’ বরাদ্দর মধ্যে রয়েছে সমতলের আদিবাসী, দলিত-হরিজন ও অন্যান্য জনগোষ্ঠী। ৮৫ লাখ মানুষের জন্য এক বছরে ৩০ কোটি টাকায় কী হবে?”
“এই টাকা কে খরচ করবে?,” প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বাজেট বরাদ্দ করা হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বেনারকে বলেন, দেশে সমতলের আদিবাসীদের সংখ্যা ২০ লাখ। আর সরকারি হিসাবে দলিত-হরিজন রয়েছে ৬৫ লাখ।
প্রসঙ্গত সরকারি হিসেবে দেশের ৩৯টি আদিবাসীর মোট জনসংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার পাহাড়ে বসবাসকারী ১১টি আদিবাসীর জনসংখ্যা ১০ লাখ। বাকি ২০ লাখ বাস করেন সমতলে।
পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসীদের জন্য পৃথক একটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় রয়েছে।
আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বেনারকে বলেন, “আমরা ককাসের সদস্যরা সমতলের আদিবাসীদের বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, সমতলে ২০ লাখ আদিবাসী আছে না কি? তার অর্থ হচ্ছে উনি সমতলের আদিবাসীদের দেখেন না। তাই তিনি বাজেটে তাদের নাম উল্লেখ করেননি।”
“উনি আমাদের বলেছিলেন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য উনি ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করবেন; উনি তার লাল নোট বইয়ে বিষয়টি লিখে নেন। কিন্তু সেই লেখা লাল বইয়ে লেখাই রয়ে গেল,” বলেন বাদশা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আমরা সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় চাই।”
“আপাতত মন্ত্রণালয় গঠন করা না গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি উইং বা শাখা করে তার আওতায় সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে,” তিনি বলেন।
“এ পর্যন্ত বিষয়টি (আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ) দেখার জন্য যেহেতু কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নেই, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই থোক বরাদ্দ পরিচালনার জন্য সমতলের আদিবাসীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি বা বোর্ড গঠন করা যেতে পারে,” মত দেন সঞ্জীব দ্রং।